এই মাসের কবি : সোনালী ঘোষ
আলাপ পর্ব
বিধান রায়ের স্মৃতিবিজরিত শহর কল্যানীর বাসিন্দা সোনালী ঘোষ। কবিতায় সব সুখ ,উপশম খুঁজে পায়। টুকটাক লেখালেখি , প্রথম প্রকাশিত বই যাপনচিত্র প্রকাশনীর হাত ধরে "হে তথাগত"। যোগাযোগের ঠিকানা ইমেইল : arunangshu3011@gmail.com
কবিতা
মেষপালকের জন্য অসুখ
মেষপালকের জন্য মন কেমন করলেই
জ্যোৎস্না রঙের ভ্রমর,
নাভিকুণ্ডে লিখে যায় অসুখ,
মোমের থেকে দ্রুত গলন হয় মনের
ইথার তরঙ্গ বইতে থাকে জোনাকির পাখায়
চিরকালের অজ্ঞাত গল্পরা ঝুপঝাপ করে নেমে পরে
বড় পার্থিব হতে চায় তারা,
চোখের পাতায় ঠিকরে পরা আঁধার
আমায় কিছুতেই আর ঘুমাতে দেয় না
কেউ ফেরার নেই
এভাবেই একদিন পূর্ণচ্ছেদ টেনে চলে যাবে জানি
সেদিন আকাশে থাকবে না মেঘের আনাগোনা
এখন জানলার পাশে অসংখ্য ঘাসফড়িং ঘাসের
শরীর নিংড়ে নিচ্ছে
তুমি তো জানো মধ্যদুপুর
জিরাফের গলার মতো আলোর রেখা ধরে
বোকা বানায় আমায়,
একটি অস্থিরতা সে মুহূর্তে অগোছালো করে দেয়
নিষ্পলক দৃষ্টি চায় তোমার হাল-হকিকত
আর সঙ্গে সঙ্গে একটা ডিপ্রেশনের ঢেউ...
সবকটি জানলার বোতাম আটকে দেই
জানি কেউ ফিরবে না
আসলে ফেরার নেই কেউ...
আকাশটিকে ঘিরে আছে শুধু পুকুর
অসময় বিদ্ঘুটে রকমের নিমজ্বর
পুকুর পাড়ে বসে মেয়েটি একাকী চোখ মুছতে মুছতে
জলপট্টি করে যাচ্ছে।
ওর শরীরের কাঁচা মাংসে, নীল ছোপ।
নীল রঙের তফাৎ সে বোঝে না
সে তো কেবল আকাশ চেনে,
এখন আকাশটিকে ঘিরে আছে শুধু পুকুর...
মা নিষাদ
শিষ দিতে দিতে একটি পাখি উড়ে গেল,
এক ঝাঁক রেডোডেনড্রন পড়ে নিল সবটুকু।
গাছেদের পাতায় জড়ো করা মেলানিস্টিক রঙেদের
অরণ্য শুষে নিচ্ছে দ্রুত;
এ সবের মাঝে এক অদ্ভুত কাহিনি...
রাতের আকাশে সে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছে আলোর বুদবুদ
তারারা লুফে নিচ্ছে তার এক একটি স্বরবর্ণ, ব্যজ্ঞনবর্ণ...
আর দীর্ঘ শোক ভুলে
কারা যেন মহাকাব্য লিখে নিল।
ঘুণপোকা
দু’আঙুলের ফাঁক দিয়ে কত জল কত সম্পর্ক;
সামান্য ইঙ্গিতে অনুভবী মন ও অন্ধকারে
পরে নেয় মৃত বল্কল...
হৃদপিণ্ডের ভেতর মাছের অসংখ্য কাঁটা
ঘুমের ভেতর অসংখ্য বিদ্যুৎ,
সোজাসাপ্টা কোনো মানুষ নেই
যার মিথুন রাশির মতো ঠোঁট
মুখোমুখি অথচ অশরীরী...
ব্যূহ
মৃত্যুর সূত্র এত জটিল ,
না’হলে আগুন আর জল এত কাছাকাছি এলে
আগুন নিভে যেত না।
মৃত্যু হতে গেলে আস্ত জীবন প্রয়োজন
গলিত আলোর রেখাও একদিন ঐ পথে...
অবসাদ নেমে এলে
চেয়েছি সেই সব নির্বাক সান্ত্বনা,
তুমিও পারো সেই সব জোনাকি বুদবুদ জন্মদিনে
কিছু ঝরা পাতার মতো আশ্চর্য সন্তাপ রেখে যেতে।
জলঘুম
সব ধুয়ে যায় একদিন
এ রক্ত মাংসের শরীর... মাটি...
ভরসা টুকুও...
এইরূপ দীর্ঘসূত্রী আলাপ ভালো;
তবু দূর থেকে ভেসে আসা প্লুতস্বর
আলুথালু করে দিয়ে যায় উপসমহীন গাঢ় বিষন্নতা
পরিব্রাজক
এইতো ফেরার মরসুম
এখনও যদি না এলে,
গৈরিক বেশ নাও তবে।
আচ্ছা, নিদেনপক্ষে একটা নদী কিনে দিতে পারো যদি
প্রিয় পানপাত্র দিয়েই দেবো, স্পর্শজ সুখ রেখ তাতে
ডেকে নিও মেরুপ্রভাদের
আস্ত সূর্যাস্ত মোড়া দেশে
কি নিশ্চয়তা দেবে তাকে?
তুমি যে পারো না ফিরতে কোনোদিন
তোমার তো উড়ানে কেবল পরিব্রাজক বৃত্তি....
ইবাদত
রোদের কাঁটা ঘুরতে ঘুরতে পেরিয়ে যাচ্ছে
কত আলোর মণ্ড,
সুগন্ধী এলাচের ঘ্রাণ দূর থেকে ডাক পারে...
জন্মশোক ভুলে যাই, মুছে দেই শরিকদের বিবাদ
বাতাসের গায়ে কত শিমূলের নাছোড় তুলো
আসা যাওয়া করে…
এইসময়কেই মনে হয় একমাত্র সত্য।
এখানে বারোমাস কনকনে শীত
এখানে বারোমাস কনকনে শীত
বসন্তের ট্রেনও থমকে...
লম্বা বারান্দা জুড়ে, শুধু শুয়ে
থাকে ক্ষুধাতুর বাঘিনী,
আলোছায়া তাল পাকিয়ে স্তনবৃন্তে
গায়ে বহুযুগ আগে ঝ’রে পরা পলাশ রঙের ঋতুস্রাব
চোখেমুখে হিংস্র এক মায়া;
কেঁপে ওঠে
কেঁপে কেঁপে ওঠে...
এখানে বারোমাস কনকনে শীত...