যে মেয়েটি সেজেগুজে কবিতা হয়েছে
প্রতীক মাইতি
সিগারেট জ্বালাতে গেলে টের পাই এক নিঃশ্বাসে আগুন নিভিয়ে দিতে পারি আমি। বারো বছর আগে যখন মেয়েটিকে অনেকক্ষণ চুমু খেয়েছিলাম, আমাদের নিঃশ্বাস পড়েনি, সে বুঝেছিল শীতকাল এলে তার সংসার পুড়তে পারে খিদের আগুনে। একটা স্ফুলিঙ্গ আর দাউদাউ আগুন এক না।
বস্তুত শীতকালও সবার এক না। বুকের ভিতর বুদবুদ সোচ্চার, খেজুর রসের মতো টগবগ ফুটছে। মেয়েটি ফেনা কেটে গেলে লাল টুকটুকে গুড় দিয়ে পায়েস রান্না করে তুলে দেবে ছেলেমেয়েদের মুখে। বারো বছর আগে সে বুঝেছিল একটা সিগারেট আর সংসারের হাঁড়ি এক না।
বস্তুত এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো কবিতাটা। প্রবল গোঙানির স্বর চাপা দিত ছাই ওড়া চিতার উচ্ছ্বাস। চারধারে দাউ দাউ পাণ্ডুলিপির মুখাগ্নি, মেয়েটি বুঝেছিল একটা সংসারধর্ম আর একটা কবিজন্ম এক না। আমার মধ্যে ছিল মৃদুল মহাকাল, হিমাংশু বৈশ্বানর।
সংসারতত্ত্ব
সিদ্ধার্থ দাস
স্বপ্ন দেখে উড়িয়ে দিয়েছি ঘুড়ি
ভোকাট্টা।
পরজন্ম সোদপুরে থাকে
সংসার সাজানোর ফাঁকে
ক্যালেন্ডারে লেখা বাজার ফর্দ
নুন চিনি জল
রাসটক্স মাস মাহিনা।
কখনো ছাতার তলায় সংসার সাজানো
সেন্ট্রাল পার্ক!
ইতিহাসের পাতায় কোনো সম্রাট
মিনারে যুদ্ধবিজয়—
অবিস্মরণীয় স্মৃতিচিহ্ন রাখে।
বৈদূর্য্য সরকার
ছিমছাম দ্বীপে
মঞ্চ আলো অহংকার প্রতিষ্ঠান পিঠ চাপড়ানো
কিছুর আশায় সবাই শুরু করেছে শিল্পচর্চা,
একটা সময় পর সব থাকে শুধু যায় নেশা ।
তাই ওসব বেশি না ভেবে
সাদা কাগজে অক্ষর ভরার খেলাটা
চালিয়ে যেতে হবে তোমাকে,
সেই অনাগত সনাতন পাঠকের কথা ভেবে
যার সামনে দাঁড়ালে যাবতীয় পুরস্কার ধরাকরা
গোষ্ঠী কিংবা ছকবাজি মিথ্যে হয়ে যায় ।
গ্রাসাচ্ছাদনের জন্যে মেনে চলি বসের হুকুম
পরিবারে থাকতে মানাই সব এলোমেলো কথা
সমাজের রীতিনীতি কিংবা সংগঠনের শৃঙ্খলা
সেও মাথা পেতে নিতে হয় পুরনো নিয়ম ভেবে,
কিন্তু হাতে কলম থাকলে
আর কিছুই মানতে আমি বাধ্য নই
অব্যর্থ
ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
সময়ের ব্যর্থতায় নিজেকে মুড়িয়েছি;
যে খুসখুসে ভাবটা এতকাল গলায় ছিল
যেন আজ প্রতিবিম্বে।
অগুনতি চাবি দিয়ে তালা খোলার চেষ্টা ক্ষান্ত হলে
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ধোঁয়ার কুণ্ডলী জমে
ঠিক সেই ব্যর্থ প্রচেষ্টার মত -
শেষ ল্যাপে আটকে যায়।
সময়ের তল পাওয়া যায় না,
তাকে শুধু জড়িয়ে নেওয়া যায়।