নকশিকাঁথা
পায়েলী ধর
সেলাই করে সেলাই করে কপাল জুড়ি
ভ্রষ্ট কবির এরচে’ বিশেষ কাজ কিছু নেই
দু’চার গণ্ডা মানুষ ছিল, বন্ধুবেশী
এবং ছিল আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখা
তাসের বাড়ি পলকা শরীর কী আর বোঝে
দু’দশ মানুষ বন্ধুবেশী হারিয়ে গেছে
পথের থেকে যেমন অনেক পথ ভেঙে যায়
জলও যেমন গড়িয়ে যাওয়ার শর্ত মানে
সেই নিয়মেই একক হওয়া, একলা হওয়া
কবির তেমন ঘর থাকে না, ভূ-গোলকও
পাড়ের কাছে নদীর যেমন বুকজোড়া টান
ভাঙে এবং জুড়তে-জুড়তে ঘা শুকনো
তেমন কোনও ভ্রষ্ট কবির শব্দে ফেরা
কেউ জানে না, বন্ধু কিংবা ছদ্মবেশী
সমন্ন্যাস
অর্ণব চৌধুরী
গ্রহের আঁধার ফেরে, অন্ধকারে চূড়ায় চূড়ায়
কে যেন বসেছে একা ধরে আছে ত্রস্ত জাহান্নাম
করোটির অন্তর্লোকে নিয়তির ডাক আসে, যায়
স্বপ্নহীন এ-জীবনে, উড়ে আসে কয়েকটি খাম
জোৎস্নার আলো কি আসে, জোনাকিরা দেয় নাকি ঘুম!
ভ্রমের শহর জুড়ে দরজা খোলে কোনো দেবদূত
ভাঙতে ভাঙতে কাঁচগুলি মিশে যায়, ধূলির কুসুম
ছিটকে আসে তার গায়ে; খানিকটা বিষম, অচ্ছুৎ
এসবের পরও যেন আকাশের আকুল-মেঘেরা
সমস্ত ভিন্নতা নিয়ে মিশে যেতে চায় কোনো রঙে
যে রঙে বর্ষার মতো ঝরে পড়ে রামধনু জল
গ্রহের আঁধার ফেরে প্রিয়,ফুল ফোটাবার ঢঙে
সাতরঙে বসে তারা সাঁতরায় সমস্ত কৌশল
ফেরে কি তবুও কেউ, বলো তাকে, কাকে বলে ফেরা
দুধ কা দুধ পানিকা পানি
সতীন্দ্র অধিকারী
কতো রঙে ছোপাবে নিজেকে! ক্রুশ চিহ্নের ওপর
ছিটিয়ে দিচ্ছো যে শান্তিজল
মানুষ দুঃখ আর সুখ
আর নিম্নমধ্যবিত্তের দিনাতিপাত
#
টের পাও।
টের পাও তুমি?
কতখানি রেণু থেকে রেণু
কতখানি তেজ
#
যতখানি দেখাও গেরুয়া
ভেতর কি তোমার ততখানি
#
মনে রেখো। সব পাখির ঠোঁট কিন্তু বাঁকা নয়!
আলোর ভালোবাসা
শায়লা সিমি নূর
পড়ে থাকো দ্বীপ হয়ে
উড়ে যাক সব শৃগাল।
আর গাছেদের অপেক্ষায়
পাহাড় চেয়ে থাক দিগন্তে....
যেখানে ঘন বোনের ফাঁকে
একটি হরিণ শাবক
লাফিয়ে চলে....
জানেনা কোথায় তার গন্তব্য।
শহরের টেম্পু
বরাবর চলছে...
ঘন বৃষ্টি ....
আল্লাহর অক্ষরে
ভেজা ভেজা লেখা
সময়ের চেয়ে
জীবনের মূল্য বেশি
এই' জীবনে আশ্রয়
হয়ে থাকে!
তবু চোখের জলের
আশ্রয় হয়না কেউ
জানে মোর্শেদ তাও.....
শেষ চিঠি আর
আলোর ভালোবাসা !
যদি প্রশ্ন করি... কেন ?
উত্তর সমুদ্রের গভীরতা যেন!
দায়
তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়
গোড়ালি ডোবেনি, তাই ওখানেই তীর গেঁথে দাও।
অনেক জয়ের গল্পে মহাকাব্য একঘেয়ে লাগে।
এবার হারের গল্প; রজঃস্বলা ফুলের পরাগে
গাছের নির্বাকজন্ম মুহুর্মুহু পারো তো সাজাও।
কোথাও নির্বাণ নেই। বোধিবৃক্ষে সংসারী বাদুর
অপলক ঝুলে আছে, শীর্ষাসনে, সাধনা-প্রয়াসে।
প্রতি নিরঞ্জনে আজও মূর্তি মরে যায় অনায়াসে;
প্রতি আবাহনে নামে, দেবী নয়, মূক ত্রুবাদুর।
অথচ বাউলপুজো পুরোহিত শেখেনি কখনও।
উপচার জানা নেই। মন্ত্রশুদ্ধি ব্যর্থ পুরোভাগে।
দোতারা আয়ুধ ভেবে ভুলের পরিধি বেড়ে যায়।
তবু ত্রিবেণীর ঘাটে ঢেউ ভাঙে; মুখ তোলো, শোনো।
অনেক হত্যার পরও রতিস্পৃহা ফিনকি দিয়ে জাগে।
গোড়ালি ডোবেনি, তবু এ-শরীর যুদ্ধে যেতে চায়।