top of page
Durga Puja Offer Banner Design Free Download - 1965x1335.png

পুজোর মাসের কবিতা

ভবিতব্য
প্রবালকুমার বসু



মেঘের মধ্যে লুকানো রয়েছে স্পর্শ
আঙুলে আঙুলে নিবিড় হচ্ছে ইচ্ছে
মেঘের আড়ালে বসে বসে জলস্তম্ভ
বারবার করে কেউ যেন ভেঙে দিচ্ছে

একফালি মেঘ তোমার জন্য হয়ত
চুরি করে এক কিশোর কোথায় চলেছে,
চলতে চলতে কখন যে সে প্রৌঢ়
মেঘ জানে কার বয়স লুকিয়ে বেড়েছে

মেঘের আড়ালে চুরি করা এক স্পর্শ
বাতাসের আর্দ্রতা মেনে তবু নিয়েছে

 

 

 

ম্যাক্স ব্রড

হিন্দোল ভট্টাচার্য

 

ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। উঠে দেখি, সামনেই বসে আছেন কাফকা। না ঠিক কোনও পোকার মতো দেখতে নয়। চোখের তলায় কালিও নেই। শ্বাস নিতে অসুবিধে হচ্ছে?

 

উত্তরে চুপ করেই থাকলেন। আমিও চুপ করেই থাকলাম। বাইরে শ্রাবণ। ভিতরে শ্রাবণ। আর আশ্চর্য ভয়। কাফকা বসে আছেন। আর ক্রমশ আমি রোগা হয়ে যাচ্ছি। এলোমেলো উড়ে যাচ্ছে পান্ডুলিপি। চেনা, পরিচিত, ইস্কুলড্রেসের মতো লেখা।

 

আর কাফকা অস্ফূটে বলছেন, আমার লেখাগুলো তোমরা পুড়িয়ে দিলে না কেন?

 

আমার ভয় করছে। মেঝে, ছাত দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। দেওয়ালগুলো দূরে সরে যাচ্ছে। আকাশ গাইতে গাইতে একটা মাঠের মধ্যে চলে এসেছি। দূরে দূরে পাহাড়। সেখানে আমার ঘরের দেওয়ালগুলো। আমার ছাত থেকে মেঘ নেমে আসছে মাথার উপর।

 

ক্রমশ আমার দিকে এগিয়ে এলেন তিনি। ফ্রাঞ্জ কাফকা। আর বিড়বিড় করে বললেন, “ আলোই অন্ধকার, অন্ধকারই আলো।” আমার ঘর আর খুঁজে পাচ্ছি না আমি। সমস্ত দেওয়াল দিগন্ত হয়ে গেছে। সব পাখি ঘরে ফিরবে মনে হয়। আমি ঘুমোব না। ছন্দ শুনব। কথা শুনব। জল দেব ঘাসে।

 

 

 

চাবুক

সৌমনা দাশগুপ্ত

 

 

কল খুলতেই দেখি কী কাণ্ড, জোছনা নামছে ঝরঝরিয়ে

কথার ভেতরে বসে চাঁদখোর সাপ

 

একটি দৃশ্যের জন্য মুখ ঢেকে শুয়ে আছে সেগুন শিরীষ

গোপন করাতে সব ফালাফালা সমস্ত সবুজ

গাছেদের মুখানাচ অনন্ত জঙ্গলে

 

লাফিয়ে একটি গাছ ঢুকে গেল মাথার কোটরে

 

সেদিন থেকেই তুমি আলপিন লিখে রাখো

নিওলিথিক পলির গল্প, পাথরের উপকথা

 

মুঠোর ভেতরে বাজে ফসিল-গীতিকা 

মুঠোর ভেতরে এক জ্বলন্ত তন্দুর

 

গলিত লোহার স্রোতে ভেসে আসে লুপ্ত প্রজাতির পাখি

ম্যামথের বৃংহণ, তাদের সফেদ দাঁত

মাতাল জ্যোতিষ্ক যেন টলমল টলমল

 

স্টিমরোলারের ত্বকে অশ্রু ফুটেছে

 

সধূম চাদর গায়ে একলা চলেছে হেঁটে স্মৃতির মেলাংকলি

কসমিক নীলে আঁকা পাইনসারির নীচে তারই পায়ের ছাপ 

তাদের বমনে জ’মে শহরের চুল্লির আঁচ 

 

ধাতু ও রক্তের এক সটান চাবুক ঝুলে আছে আকাশের থেকে 

 

 

 

খণ্ড

পার্থজিৎ চন্দ

 

যে কোনও সকাল, এ শরতে, আজ মধুপুর

গলায় স্কার্ফের দাগ বলে দেয় তুমি বেড়াতে এসেছ

এই বন, বনের আড়ালে টিলা ভাল লাগছে তোমার

সবুজ চেয়ার থেকে দূরে বসে আছি আমি অন্ধ-চিত্রকর

সূর্য উঠছে ধীরে, পারদের গোলা। ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ছে মাটিতে

ঘাস জ্বলে যাচ্ছে, ধাক্কা খেয়ে ভেঙে যাচ্ছে জলের গেলাস

অন্ধ স্নায়ু জুড়ে চলকে উঠছে তোমার স্তনের রেখা, কর্ণিকা

ডানা ঝাপটে ঘুরে মরা প্রজাপতি, অলকচূর্ণের কাছে

ঝিকমিক করছে এক একটি পারদ-সূর্যের গোলা।

সন্ধ্যা নামছে মধুপুরে। অন্ধ-চিত্রকর আমি

সারাদিন তাকিয়ে দেখেছি সুদর্শন-চক্রে ছিন্ন

কীভাবে তোমার দেহ, অসহায় ক্যানভাস ফেলে

খণ্ড খণ্ড, অগোচরে ছড়িয়ে পড়েছে

 

 

 

 

ফুলসমাহার

সেলিম মণ্ডল

 

ফুল ফুটবে বলেও ঝরে গেল

 

ঝড়ে কে দাঁড়িয়ে?

 

একটা আহত মানুষ

নিহত বায়ুর শরীরে থোকা থোকা...

 

কেউ দেখে না— ফল

কীভাবে না পেকেও পাখিতে খায় ছায়ার ফানুস

 

ফুল ফুটল

ছুঁচের মতো

 

আহা, ব্যথা; তুমি জানলে না...

 

গাছে গাছে মিথ্যাই ভরিয়ে দিলে

পুত

    প্রেত

         প্রাণ

 

এই অন্ধবনে, ক্রমাগত

ফলের ত্বকে মাথা কোটে--

 

একটা ফুল-রঙা পাখি

 

 

চলতি কা নাম গাড়ি

সুন্দরম

 

বিষুবরেখার মতো লম্বা; লঘু অভিকর্ষের রাত।

মেরুবিন্দু তাক করে নিশাচারী বানজারা গান।

ক্রমে ছোটো দিন, তেরছা সূচালো।

কাঁধ ছাড়িয়ে ছায়া উঠল বড় হয়ে

ভয়ের মতো অহেতুক সন্দেহপ্রবন

 

প্রিয়তমাসু ভ্যালিয়াম, মাই লাভ!

 

সময় বেঁকে গেল একশ আশি ডিগ্রি সমান।

সে লোক আঁধারমানিক কালো;

দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে দশদিক ও কাল

গিলে খাচ্ছে সমস্ত অস্তিত্ব প্রবাহ

গিলে খাচ্ছে প্রেম ও পাপ

 

অবিমৃষ্যকারী ভালোবাসা অনুতাপ...

 

হাতের রেখার কাটাকুটি জন্মদাগ

চিত্রিত হলো হিজিবিজি, গালে মুখে কপাল চাতালে।

মেঘের সার্ভারে জমিয়ে রাখা গেল এক টিবি স্মরণাতীত;

রাতের পর রাত এল দিন শেষে

মরা তারা দিল ভরহীন আলোক ফোটন;

 

আত্মা বিক্রির পয়সায় খরিদ হইল ভাগ্যশ্রী সুপারডিলাক্স।

 

এবার, হরি হে দীনবন্ধু, হাত ছেড়ে বেরিয়ে পড়া যাক

যে ভাগ্য পরিহাসের, ভবিতব্যের কিরে কেটে

লগনচাঁদা নাম জুটিয়ে তাহার সাথে...

 

 

 

বন্ধুহত্যার পর

সৈকত সরকার

 

ছুরির বিকল্প ভাবি, উঠে আসে শেওলা ধরা ছাদ।

ঘুড়ির লড়াই শেষে নেমে যায় অতলের দিকে।

ফেরার রাস্তা নয়, ক্রমশই জল দিয়ে ঘেরা,

যদি তাকে ছুঁয়ে থাকো, তাকেই তো ছুঁয়ে থাকা হবে।

মৃতদেহ ছুঁতে হয়, একা ফেলে চলে যাওয়া পাপ

একা যাকে রাখি, সে তো পাতানো ফুলের মতো নয়

অথবা এমনও নয়, ঘুমে ভেজা নিখাদ প্রহরী

নেবে তাকে? 

 

শোকে নয়, এমনই ধূসর আলো জ্বেলে

বন্ধু হনন করে মৃতদেহ ছুঁয়ে বসে থাকি।

 

 

 

প্যাটার্ন বিষয়ে

তৃণা চক্রবর্তী 

 

মৃত্যুর কথা আমি জানতে চাই নি

আমি গিয়েছিলাম জীবনের কথা জানতে

যে গলিতে এইসব খবর বলা হত

তা অনেকদূর অবধি চলে গিয়েছে

বাড়িগুলো সম্বন্ধে খুব একটা ধারণা করা যায় না

সাধারণত এইসব দিন হয় অহেতুক মেঘলা বিকেলের মত

 

আমি গিয়েছিলাম জীবনের কথা জানতে

যার মধ্যে মৃত্যুর কোন ছায়া নিয়ে আলোচনা নেই

জীবনের কথা জানতে আমি কতদূর অবধি চলে যেতে পারি

আপনারা জানেন সে কথা

 

নতুন করে বলার কিছু নেই

পুরনো একটা প্যাটার্ন আমাকে ফলো করে চলেছে

আমি অনেকদিন থেকেই সন্দেহ করছি

এভাবে চলতে দেওয়া ঠিক নয়

 

অথচ একটানা বৃষ্টির মত গলা, নিচু স্বর আমাকে বলল

প্রথমেই বলল, মৃত্যুর কথা

তারপর ধীরে ধীরে জীবনের কথাগুলো 

সেসব কী চূড়ান্ত অর্থহীন হয়ে গেছে ততক্ষণে

অনেকক্ষণ ফেলে রাখা চায়ের কাপের মত, ঠাণ্ডা

 

আমি গিয়েছিলাম ওই প্যাটার্ন সম্বন্ধে জানতে

এসব বিষয়ে জানতে আমি কতদূর চলে যেতে পারি, আপনারা জানেন  

index22_edited.jpg

চিত্র - দুর্গা / মকবুল ফিদা  হুসেন / ১৯৯৪

bottom of page