top of page

দশটি কবিতা / স্বর্ণেন্দু সেনগুপ্ত

একটি গানের শেষে

একটি গানের শেষে, তাদের মুখের থেকে বড় লাগে

সঙ্গীতের স্মৃতি

গান তো এভাবে কারও ভূমিকার কথাগুলি শোনে

কারও চেয়ে থাকা নিভৃতির কথাগুলি শোনে

রাত্রির শেষদিকে, একটি গানের কথা, তাদের মুখের থেকে

বড় হতে থাকে

স্মৃতির ভিতরে কারো জেগে থাকা এখনো রয়েছে

কণ্ঠের ভিতরে আজও যেভাবে রয়েছে সব গান

একযোগে বেজে ওঠা যেভাবে রয়েছে

তবু সন্ধের কথা হলে, একটি প্রবৃদ্ধ হাসি, বেজে ওঠে

চারুবালা শিল্পী নিকেতনে






নশ্বরতার ঐশ্বর্য


নশ্বরতার ঐশ্বর্য তার নাকফুলে লেগে আছে

এভাবেও জীবনের ছায়া চেনা যায়

নীচু হয়ে আসা উটের গলা, গ্রীবাভঙ্গি রচনা করেছে

বিস্মৃতির ধার দিয়ে বেড়ে ওঠে আলোচনাগুলি

পাথরেও রোদ লাগে, যেভাবে লেগেছিল রৌদ্রছায়াহীনতাও একদিন

পাথর, পথের গল্পের থেকে কখনো কঠিন

কখনো অনড়, বাতাসের স্পর্শে জেগে থাকে

আজকে সকালবেলা, নশ্বরতার সব ছায়া নাকের ফুলের ভিতরে গড়ে ওঠে






খোলা জানলার অংশবিশেষ

এক.


সুখী মানুষের ভিড়ে, আরো কিছু সুখী মানুষের কথা

আত্মহত্যার দৃশ্য থেকেও, দ্রুত ও অনভিপ্রেত

আবেগে বেজে ওঠে

সামনে তোমার বিস্তৃত পূর্বদিক খোলা পড়ে আছে

খোলা পড়ে আছে জানলার কাচগুলি

অনেক অনেক অভূতপূর্বের পর, সামান্য পক্ষীস্বভাব

বাতাসের মৃদুসম্ভাষণ, আমাদের দাক্ষিণ্যের ভিতরে এসেছে

এইখানে, সকল কথার সমাপ্তি, তৃষিতবিশ্লেষণ

পাতায় বিন্যস্ত সুখবোধ জেগে থাকে

একটি ঘরের ভিতর, শিশুর সম্ভাবনা নিয়ে

প্রতিটি সম্ভোগ রাত্রিটিকে অধিকার করে আছে বলে মনে হয়

সেই ভীষণ ভাবনাগুলি বেঁচে আছে, তারা বেঁচে আছে

সুখী মানুষের ভিড়ে, কিছু সুখী মানুষের কথায় কথায়...

একটি আত্মমগ্ন রচনার ভোর যেভাবে বেঁচে থাকে আমাদের সকল লেখায়







দুই.

সামান্য মুহূর্ত নিয়ে এত বেশি আলোচনা

সুখী মানুষের কথাপরিকল্পনায়

ধরা হয়ে আছে

বাতাস এখন বেশি দূরে দূরে নেই

জানলা, তাদের কাছে প্রত্যাশার বেশি কিছু

দিয়ে যেতে পারে

ঘরের একটি ভূমিকা, পশুপক্ষীর ছায়া

গোচারণ ভূমির সবুজ, মধ্যমাবায়ুর দেশ

মানবিক ভূগোলের পরিসর রচনা করেছে

এখন এই পড়ন্ত ভূমিকার শেষে

কিছু সুখী মানুষের মুখ, অনুচ্চারিত হাসি

কথায় কথায় নিয়তিরঙিন হয়ে যেতে থাকে, দেখা যায়






তিন.

কারো পূর্বদিক খোলা পড়ে থাকে, বাস্তুসাপের প্রদক্ষিণ

ভূমিকার নিজস্ব প্রয়োজনে কারো কারো মনে থেকে যায়

এখানে, বিস্তৃত মতের সন্ধানে, অতৃপ্ত মানুষেরা আরও একবার

মানবিক ভূগোলের আসর জুড়ে বসে, ভোরবেলা থেকে

তাদের হাসির গল্পগুলি, চোখের সামনে এসে, বিশ্লেষণযোগ্য হয়ে ওঠে দিন

তারা কিছু সুখী মানুষের কাহিনি নিয়ে বসে থাকে

ঘরের পূর্বদিক খোলা পড়ে থাকে তখন তাদের

সুদূর প্রসারিত রাস্তার ছবি

দেওয়ালের ছবি হয়ে রয়ে গেছে যদিও সেখানে

তাদের ভ্রমণকথা, সুখী মানুষের কথার প্রহর জুড়ে

কখনো সখনো আলোচনার যোগ্যতায় মুখে মুখে ঘোরে



চার.

জানলাগুলি প্রশস্ত সময়ের কাছে খুলে রাখা আছে

চারকোণা দৃশ্যটিকে মনে রেখে, ঘরের ভিতরে তারা

কূটকাচালির মনস্তত্ত্বে মেতে উঠেছিল

বাইরে পৃথিবী ছিল, সেখানে যেভাবে গাছগুলি অস্তিত্বের সারাৎসার জুড়ে

রৌদ্রস্বভাবী হয়ে ওঠে, সুখী মানুষের কথাগুলি, মুখ থেকে মুখে

ঘুরেফিরে এসেছিল তারপর সব একে একে

জানলার চারপাশে কিছু দৃশ্য এখনও মলিন, একাকীত্বের প্রকৃত দোসর

পাখিগুলি উড়ে উড়ে ক্রমশ সেই চৌকোপৃথিবীর স্বপ্নটিকে পার হয়ে যায়

সুখী মানুষেরা, প্রতিদিন চায়ের টেবিলে, একযোগে একাকীত্বের মন্ত্র পাঠ করে


পাঁচ.

সামান্য কথার কথা তারও কিছু আবেদন আছে

ভিড় ঠেলে, জানলায় জানলায়, কিছু মানুষের মুখ দেখে

চেনা হয়ে গেছে আজ সুখী মানসিকতার আচরণগুলি

পাখি, পড়ন্ত বিকেলের পাখি, ঘরের দক্ষিণ জুড়ে

তাদের পালক উড়ে যায়, এভাবে পূর্ব নয়

পূর্বের প্রশস্ততা জনে জনে বুঝে উঠবার দায়, এভাবে নয়

ভোরের কিছুটা আগে, পাখির কিছুটা আগে,

হেসে উঠবার দায় যেভাবে রয়েছে

পাখি, সুখী মানুষের পৃথিবীতে, একবার উড়ে গেলে

আরও কিছু বিসর্গকাল, আরও কিছু ভূমি ও পাতাল

একযোগে টের পাওয়া যাবে আজ, বোঝা যায়


ছয়.

একটি দুপুর ঘিরে, স্থাপত্যের অনুভবে, গাছগুলি

ছায়া দিয়ে থাকে, বাতাস তবুও দেখি

অনুভূমিকার দিকে, সুখী মানুষের দিকে

বিস্তৃত হয়ে যেতে থাকে

মানুষেরা কখনো পশ্চিম ভুলে, গাছে গাছে

পাখির কলহ দেখে হাসে

একদিকে বিকেলবেলার কথাগুলি যদিও শুনেছে তারা

অন্যদিকে ভূমিকার স্মৃতিচিহ্ন তাহাদের বংশতালিকায়

আঁকা হয়ে আছে, বিকেলের কথার ভিতরে

একটি পশ্চিম, পশ্চিম শুধু

যাবতীয় ইতিহাস সেখানে অচল

আধুনিকতার চাপে স্তব্ধ হয়ে আছে

সুখী মানুষেরা তাদের পৃথিবীজুড়ে

পশ্চিমতা খুঁজে খুঁজে ফেরে

গাছ থেকে গাছে, পাখিপরিক্রমায়




সাত.

তারপরও ভেঙে যায় এক একটি সুপুরিগাছের স্মৃতি

রান্নাঘরের পশ্চিম যেখানে পড়েছে

দূরে কোনো বৃক্ষস্থপতি, রন্ধন প্রতিযোগিতার শেষে

নিজের বল্কলগুলি খুলে খুলে রাখে

আজকে আকাশ বড়ো আকাশের মতো,

বাতাস যেভাবে গাছের পাহারা গড়েছে

বিকেলে রেডিও খুলে, সুখী মানুষের হাসি

বনের নিহিত ছায়ায়, ফেরি হতে থাকে...

কাল থেকে, কালের গভীর থেকে

আধুনিকতার ইতিহাসগুলি, পশ্চিমের মননশীলতায়

জনগণনার বৈচিত্র্যে, ভুলভাবে আলোচিত হলে

দিনান্তের ছবিগুলি, জানলার চতুর্ভূজে, একে একে

মিশে যাবে বলে মনে হয় আজ


আট.


লিখে রাখা আছে একতারা, যেন আঁকা হয়ে আছে একটি ছবি

আরও যে অনেক তারা পাশাপাশি আঁকা আছে, সেগুলি দেখার কথা নয়

হাসিটুকু চেপে রাখবার কথা নয়, আজকে সকালে

ভুলের মাহাত্ম্য এভাবেই একে একে বেড়ে ওঠে

চোখের ভিতর থেকে আরও কিছু দৃশ্যমুখরতা

তাদের ভাবনার বিষয় হয়েছে

ভূমিকাকে নতুন করে রচনা করবার রীতি যদিও সহজ নয়

তারও এক চেষ্টা রয়েছে, ঘর থেকে ঘরে

একটি বিনম্রবোধ, একটি স্মৃতির রেখা, সুখী মানুষের চারপাশ

রচনা করেছে বোঝা যায়

তবুও সকাল হলো, আরও কত অতীতের সকালবিকালগুলি

পরম্পরায় মিশে আছে, সকাল হওয়ায় মিশে আছে

এই বোধ একজন সুখী মানুষকেও ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকে

রচনার রীতি আছে, লিখে রাখবার মতো অগোছালো

স্মৃতি নয়, একটি তারার পাশে জ্বলে থাকে অনেক অনেক তারা

এই দেখা আরও কত সুখী মানুষের, সে কথা

বলার বিষয় নয় আর, আজ এই রচনাপরম্পরায় …





কবি পরিচিতি


তরুণ কবি স্বর্ণেন্দু সেনগুপ্তের ৩টি কাব্যগ্রন্থ এযাবত প্রকাশিত হওয়ার পাশাপাশি, একজন অনুবাদক হিসেবেও তিনি পাঠকদের সমাদর পেয়েছেন।


তাঁর গ্রন্থের তালিকা

১। ধানইন্দিরা : কাব্যগ্রন্থ : কবিয়াল : ২০১২ (পরিমার্জিত দ্বিতীয় সংস্করণ, ২০১৭)

২। পিতার জন্ম হয় : কাব্যগ্রন্থ : মনফকিরা : ২০১৫

৩। ফাঁসুড়েকে বিবাহপ্রস্তাব : মার্গারেট এটউড এর কবিতার অনুবাদ : ভাষালিপি : ২০১৮

৪। গুয়ান্তানামো : স্মৃতিকথা সাক্ষাৎকার কবিতা ছবি : সংকলন সম্পাদনা ভাষান্তর : বইপত্তর : ২০১৯

৫। নতুন এক নীরবতা : যোশেফ ম্যাসির কবিতার অনুবাদ : ভাষালিপি : ২০২০

৬। ভাষার অলিন্দ থেকে : কাব্যগ্রন্থ : অহিরা : ২০২১

৭। প্রিয় সব অপূর্ণতা : প্যাট্রিক লেন-এর কবিতার অনুবাদ : আনুষঙ্গিক : ২০২২









Comments


bottom of page