top of page

জলযান / সোমরাজ ব্যানার্জি

Updated: May 1, 2023

১।

বরফের কঠিন আবরণ ভেঙে ভেঙে একটা ভঙ্গুর জলযান ছুটে চলে মগজের মাঝ-বরাবর। তার চাকার ঘর্ষণে বহুকালের জীর্ণ ঘরবাড়ি দুমড়ে মুচড়ে যায়। পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি এক মস্ত শ্মশানের রংচটা দেওয়ালে কেউ খেলে গিয়েছে প্রেম-অপ্রেমের কাটাকুটি, যার বুক ফুঁড়ে ঝুড়ি নামিয়েছে এক প্রাচীন বট। ঠিকানাহীন কিছু স্মৃতির কোলাজ নাভিকুণ্ডের সঙ্গে ল্যাপ্টালেপ্টি করে ভেসে আছে জলে। জলযান যত এগোয়, এসব দৃশ্য ঝাপসা হয়ে আসে। মনে হয়, চোখের মণিদুটো এবার ঠিকরে পড়ে যাবে মাটিতে।


২।

এসব সময়ে চাঁদের কড়িকাঠ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে বুকের গভীরে। চিনচিনে ব্যথা, রগরগে দিন— কোথাও কেউ ডাক দিলে আচমকাই ঘোর কেটে যায়। শহরের প্রতিটা পাড়ায় এক একজন চন্দ্রাহত মানুষ থাকেন— যাদের ঘরের দেওয়াল নিষিদ্ধ রাজনীতির গন্ধে ভ্যাপসা হয়ে আছে, যারা সিঁড়ি বেয়ে নামতে শুরু করলে ধাপের হিসেব রাখতে না পেরে বারবার গড়িয়ে পড়ে যায়, যাদের কল্পনার মায়াশরীর কেটে কেটে হুল ফোটায় অলীক স্বপ্নজাল, অবশ করে দেয়— এর কোনো শেষ নেই। মৃত্যুকে কে আর কবে জীবন দিয়ে ভালোবেসেছে?


৩।

এদিকে জলযান নিজের গতিতে এগিয়ে চলে। সময়-অসময়ে তার দুই ডানায় ভর করে উড়েও নেয় খানিক। তাকে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। পথের চারপাশে শ'য়ে-শ'য়ে মৃত্যু মানচিত্র এঁকে শুয়ে থাকে। জলযান থামে না। চাকায় রক্তের দাগ শুষে নিয়ে সে তার গতি বাড়াতে থাকে। তার গল্পে জেতা-হারার কোনো স্থান নেই। সে জানে একটা চাঁদ শুধু তার সম্মুখে জ্বলছে। সেই চাঁদের কড়িকাঠ তাকে ছোটবেলায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। এই নগ্ন জ্বলন্ত চাঁদকে সে যদি নিজের কাছে রেখে দিতে পারে— যদি পারে একবার চাঁদের কার্নিশে বসে শহরের আকাশে পূর্ণগ্রহণ দেখতে। ক্রমে তার হেডলাইটের আলোর জোর কমে আসে, কমতেই থাকে। মনে হয়, চোখের মণির মতো আচমকাই তারা ঠিকরে পড়ে যাবে মাটিতে।

Comments


bottom of page