top of page

দশটি কবিতা / সিন্টু প্রধান

Updated: Dec 4, 2022

লতা পাতা ধরে ধরে নীচে নেমে যাই


ট্রেকারটি একপেশে হয়ে উল্টোনোর অবস্থায়

একজন মুখ বাড়িয়ে চিৎকার করে বলছে, 'আমাকে সাথে নাও'

সামনে বাসের ড্রাইভার মিররে উত্তর দিচ্ছে, 'নেব না'। আমরা বাসের ছাদে বসা মিছিলের লোকজন তাল মেলাচ্ছি, 'নেব না, নেব না'।


নেমেছি এক পাহাড়ের ঢালে

মায়ের কথা শেষ হলে মনে পড়ে প্রেমিকার কথা

এটা সেই পাহাড়ের ঢাল, যেখানে শেষবার দাঁড়িয়ে ছিলাম প্রেমিকার সাথে


লতা পাতা ধরে ধরে নীচে নেমে যাই

দেখা হয় নায়িকা দিদির

উপরে তার মহাপ্রভু নায়ক

চোখে লেগে আছে চশমার হাসি


মেয়েদের সাথে অভিনয়ে জুড়ে যাই

ছেলেদের সাথে গানে







ব্যঞ্জনসন্ধি


প্রতিটা সকাল জন্মদিন ভুলে যাওয়ার মতো

তুমি না থাকার আবছায়ার পরে হেলানো

প্রতিটা মৃত শিরার নামে বকুল বীজের বাঁশি

তারা আমাকে বাজায় সমস্ত ফুঁ নিয়ে করে খেলা


বারবার রাস্তা ভুলে যাই

আমার স্বরচিত রাস্তায় তোমাকে মনে পড়ে

খড়ের শরীরে মাটি বোলাচ্ছে কুমারটুলি

পুতুল নাচের মতো করে হাত পা নাড়াচ্ছি, কথা বলাচ্ছি তোমাকে







স্মারকচিহ্ন


এখন আর সেই ভয়'টা নেই

এখনো অচেনা কাটার উপর ফুল বিক্রি হয়

সুগন্ধে তেমন করে চর হয় না আর


জল নামলে জমি দেখা যায়

জমি, যা তুমি পরে আছো একান্ত উলঙ্গ সারাক্ষণ

অসংখ্য সংকেত দিয়ে তৈরি সমস্ত সংজ্ঞা

শিকড়ের ঘ্রাণ যেমন পাড় দিয়ে বেঁধে রাখে পুকুর

শীতঘুম, খোলসে এক জন্ম রেখে উঠে পড়ে নতুন বিষের সন্ধানে

আমারও নিম পাতায় কুঁড়ি এলে মনে পড়বে তোমাকে








সুবর্ণরেখা


মাঠের উপর ঘাস, হাতের উপর চাঁদ

কোন এক দেবীর মতো দেখতে তোমাকে


দূরে সেই রিংটোন বাজে

মনে পড়ে পুরনো ফোনটির কথা


যোগাযোগ মেতেছে উৎসবে

শঙ্খের ধ্বনির মতো দূর-পাড়া থেকে এগিয়ে আসছে আলো


হিজল গাছের নূপুর মাটিতে পড়তে পড়তে যতটা ছুঁয়েছে বাতাস তার থেকে বেশি ছুঁইনি তোমাকে








সাক্ষাৎ


তুমি এবং আমি দুজনেই পুরাতন


শ্বেত কণিকা ডাক দেয়,

মাথার যন্ত্রণার মতো ফিরে আসি দেহে


পুরনো প্রাসাদের গায়ে ইটের ক্ষয় দেখতে যেমন লতা পাতার জন্ম হয়


অসংখ্য দূরত্ব রেখে

তুমি আর আমি দেখে গেছি পৃথিবীর চাঁদ

যেন একই আয়নাতে দু'জনে দেখেছিলাম মুখ








কল্পতরু


তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে কত সিঁদুরে ঘাট হারমোনিয়াম বাজায়

তুমি জানো না


এখানে অনন্ত থেকে উঠে আসে বসবাস

পুরনো পুকুর জলে লাল ফসফরাস


তুমি কি টের পাও

সকলেই বাঁশপাতার নৌকা।সকালের তুলসীগাছে সবুজ হয়ে আছে


জীবন গোপনে রাখে, কুসুম প্রণালী

আস্ত পূর্ণিমা। কত চাঁদ ফালি ফালি


পৃথক পৃথক মাংস নিয়ে পাখিরা ভেসে গেছে আকাশে, কোঠরে ঘুমায়

উজ্জয়িনী, ব্যথা টের পাও?









অনুবাদক


তুমি আমাকে ফেলে দাও

আমি ফেলি অন্য একজনকে

সারি সারি সাইকেলের লাইন

পড়তে পড়তে চলেছি অন্তিমের কাছে


আমি তোমাকে হত্যা করি

তুমি হত্যা করো অন্য একজনকে

ধারাপাত, দুইয়ের নামতা

দুই এক্কে দুই, দু'দুগুণে চার


বারবার দেখো

তোমার পাশে আমি, আমার পাশে তুমিই রয়েছো


অথচ মাতৃভাষার মতো ছড়িয়ে গেলাম পৃথিবীর আনাচে কানাচে








অভাব


যত পথ এগিয়েছি, সে মৃত্যু সন্দেহ মিথ্যে হয়ে গেছে


ঘরগুলো এককালে এ পাড়াতেই ছিল, দোত‍লা দুয়ারের সামনে বিশাল পুকুর। সেই পুকুরের জলে সামান্য যাদু মিশিয়ে, তারা এখন নার্সিংহোম


রোগী চুরি করতে দড়ি নিয়ে দোতলায় উঠি— কোনো এক অচেনা টিউবে নিডল ফোঁটালে ফুরফুর করে বেরোয় লাল ধোঁয়া, প্রিয়জন শরীর ফিরে পায়


মানুষের মাথা একফালি এজবেস্টার বহন করে

এবং তা রাস্তায় পড়ে ছয়'টি থালা হয়ে যায়







ক্ষেত্রফল


মেয়েদের বাদ্যযন্ত্র হতে দেখেছি

যারা বাজাতে জানে না, শিল্পীরাও কিনে নিয়ে যায়

ছায়াহীন দূরে, ছবির মতো মুসকুরায় বাদ্যযন্ত্রের পিতা।


সকলের স্কুল খুলে গেল,

কিছু ছাত্র কড়িকাঠে বসে আছে

পাশের রুমে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীরা কাঁদছে

সিনেমার নায়ক মারা গেছে তাদের


এখন মাঠের সময়

সমস্ত মাতাল গাঁজাখোরদের একটা ফুটবল টিম

গোলকিপারটা চেনা, নাটকে অভিনয় করেছে দু'বার

হাতে লক্ষ্মী মালাম নিয়ে আমদের বলছে, ''নতুন ক্ষমা, নতুন ক্ষমা" …








সেক্যুলার


কত দৃশ্যের জন্মই হল না।তবু তাদের চিনি বলেই বাতাসে দাঁড় করিয়ে ফেলি।

মানুষ একমাত্র চরিত্র নয়, যে মুহূর্তে রাজা এবং ফকির হয়ে ঘুমকে সাজাতে পারে।


বৃষ্টি না হলে পাতা গড়িয়ে জল মাটিতে পড়ে না।

আমিও চাইনি কখনো, অনাবৃষ্টিতে বন্যা দেখুক কেউ।


তুমি কুকুরকে ঢিল মারতে মারতে আওয়াজ নিয়ে যাও। বুঝে নাও, কোনখানে আঘাত করলে কি রকম চিৎকার।


আওয়াজ ছাড়াও আমাদের অন্য এক শরীর ছিল।








কবি পরিচিতি


সিন্টু প্রধান, জন্ম ১৯৯১ সালে, মেদিনীপুরের কবি। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কবিতা। প্রথম কবিতার বই স্টেপলার প্রকাশিত হয়েছে ২০২২ সালে।

Recent Posts

See All

Comments


bottom of page