top of page
Writer's pictureyapanchitra

শারদীয়া ১৪৩০ / কবিতা সংখ্যা

Updated: Oct 15, 2023




স্মৃতি টুনটুনি

বিকাশ সরকার


কেউ তো বলেনি কখনও

টুনটুনি এত হিংস্র জিঘাংসা জর্জর হতে পারে

সে আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে রাখে

মরণের পাড়ে


হৃদয়পিণ্ড আঁচড়ে আঁচড়ে দেয়, ঠুকরে ঠুকরে খায়

আছড়ে মারে, গলা টেপে, রোজ রোজ মেরে ফেলে প্রায়


অশালীন অপমান করে, হননের হুমকি দিতে থাকে

আমাকে সে অহর্নিশ তটস্থ ভীত করে রাখে

ঘুমোতে দেবে না সে, পালকের আঁশে ভরা চোখ

ডানা দিয়ে ঢেকে রাখে দিবসের সকল আলোক


ছোট্ট পাখিটি তবে চাইছে নিতে কোনও গূঢ় প্রতিশোধ

এত তাই হননেচ্ছা, এত তাই ক্রোধ!


আমি তবু তার ছড়ানো ছিটানো পালক কুড়িয়ে কুড়িয়ে রাখি

যত্ন করে নির্নিমেষ তারই দিকে মুগ্ধ চেয়ে থাকি

আঁচড়ে কামড়ে যখন সে খুব ক্লান্ত হয়

আমারই বুকের ওপর যখন সে গড়ে আশ্রয়


বোঝা যায়, ভালোবাসা অবশেষে হলো অক্ষয়






একজন ও বাকিরা

সুদীপ বসু


একটা বাড়ি ছিল, চৌকো

একটা চৌকো জানলা

একটা ঘর।


#

একজন আয়না অবধি হেঁটে যেত

একজন পেরিয়ে যেত আয়না

বাকিরা ফিরে আসত।


#

একজন আমাকে ডাকত আমারই গলা নকল করে

একজন তছনছ করে দিত কান্না

বাকিরা ঝাঁপ দিত ছ'তলার ব্যালকনি থেকে।


#

শুধু একজন কাঁপত

থরথর থরথর করে

স্মৃতি

আর স্বপ্নের

মাঝখানে ...







কামরাঙা রঙের ছায়া ও ইচ্ছে ফুল

তৃষ্ণা বসাক

মেঘের কামরাঙ্গা রঙের ছায়া,

ঘর তার তলায় পড়ে আছে,

বিছানার চাদর পাততে গিয়ে

ছায়াদের ঝাঁটিয়ে ফেলি,

তবু যখন বেরোই, ঘরটা আবার ছায়ার কবলেই চলে যায়।

ছায়াটা আমি দেখতে পাই,

শ্যাওলার মতো ঘন আর পুরনো,

কোনদিন খেয়াল করিনি,

কিন্তু ও ছিল, কখনো ওর নিচ দিয়ে

কখনো ওর ওপর দিয়ে যাতায়াত করেছি,

যেন একটা ছায়া গোলক,

যার পেটের মধ্যে বসে আমি

একটা জাদু বৃক্ষ খুঁজে যাচ্ছি…

আমরা অনেকেই একটা গ্রহে পৌছব বলে

অনেক দিন বাড়ি থেকে বেরিয়েছি,

ক্রমে আমরা একটা অভিকর্ষহীন জায়গায়

যেখানে আমি , আমার পুরনো শরীর আর একটি জ্বলন্ত মোমবাতি

শূন্যে ভেসে থাকে,

আর গ্রহটি ক্রমশ আমাকে সম্মোহিত করে

নতুন ইচ্ছাফুল ফোটায়!






ভূত বাংলো

সেবন্তী ঘোষ


আইভি লতা লাগিয়ে চলে গেছিল

তার কবরের ঢিবিতে চুল ছড়ানোর মতো

সে লতা ভাঙা চিমনিকে গিলে নিয়েছে

নড়বড়ে বাংলো দিনমান উল্টো হওয়া থেকে

আরও কিছুদিন নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টা করে

বাগানের হাতায় চেস্টনাট আর ডগলাস ফার

একদা বহুদূরাগত মানচিত্র এনে দিয়েছিল

তাদের সন্ততিরা রুগ্ন বেঁটে তবু

এদেশি গাছেদের সঙ্গে যেন এখন তাদেরই কেউ

শুধু মধ্যরাতে কাঠের মেঝেয়

ড্রয়িং রুমে কাটগ্লাস হুল্লোড়ে

গাউনের খসখস আর জুতোর তালঠোকা শোনা যায়






প্রথম কবিতা

হিন্দোল ভট্টাচার্য


তরুণ কবির মতো আবার কবিতা লিখব বলে

এ জীবন অস্বীকার করে ফেলতে হয়

নিখুঁত কবিতা নয়, খাদ মেশানো, ভুল ত্রুটি নিয়ে

যে কবিতা পড়ে কেউ ছুঁড়ে ফেলে দেবে

যে কবিতা পড়ে কেউ বলবে

শেখো

কীভাবে কবিতা লেখা হয়

ঠোঁটে মিশে থাকবে অভিমান

পিঠে ডোরাকাটা দাগ

তবুও রক্তের গন্ধ পেয়ে যাবে অবুঝ শ্বাপদ

বাতাসে সে কুকুরের মতো শুঁকে শুঁকে

নিয়তিতাড়িত হয়ে দুঃখ শিখে নেবে

প্রেমে পড়বে ঘনঘন, -

তরুণ কবির মতো

আবার কবিতা লিখব বলে

নিজেকে বাতিল করব,

আবার প্রথম থেকে এ জীবন শিখব ঘনঘন


পোড় খাওয়া বৃদ্ধ নয়-

প্রতিটি কবিতা হবে তরুণ কবির লেখা নিরুপায়

প্রথম কবিতা






তোমাকে না পাঠানো কবিতা

অগ্নি রায়


তোমার ফিরে যাওয়ার অপরূপ আমি নোটপ্যাডে ধরে রাখি। অন্য জন্ম থেকে টুপ করে জল পড়ে তার উপর। পুকুর বোজানো সন্ধ্যার ধার ঘেঁষে গীতবিতান হাতে হেঁটে আসছে মিলিদি। গান শুরু হবে পাড়ার টিউশনে। কলে জল আসার ধ্বনির মতো আনন্দময় সে সব গান। যে আসর ছেড়ে তোমার উঠে যাওয়ার বিরল বিষাদবিন্দু আমি লিখে রাখি করতল সংরাগে। ওই তো শৈশব পাহারা দেওয়া তমাল তাল বীথি টপকে মেঘ এসে দাঁড়াল শিয়রে। এই তো তোমার তাঁতের সবুজে জ্বলে উঠল স্টেশন ছাড়ার সিগন্যাল। অপার বালকের মতো এই মায়াযন্ত্রণা টুকে রাখি রোজ। শ্বাস বন্ধ করে রেখে দিই পরমায়ুতে। তোমাকে না পাঠানো এই সব কবিতা আমার







ছেলেমানুষি

অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়


একবার উঁকি-দিলেই পাওয়া যায় না—

ক্রসওয়ার্ড-পাজ়লের খোপ-খুঁড়ে উড়ে-গেছে ভাব

গড়িয়ে পড়ছে অর্থ...

#

বেশ্যামহল্লার তিনহাত-দূরে আমরা রুমালচোর খেলতাম

কখনও পাছার নীচে, কখনও কপালেবাঁধা

ছেঁড়া-ফাটা ট্যানা, ন্যাকড়ার টুকরো—

থেকে-থেকে হল্লা ওড়ে— হোটিলোওও...

#

সেকেন্ড-ক্রস-করলেই কেউ কারো ট্রেস পাই না

বাহিরজুড়ে ডেকে-ওঠে হিজড়ের হাততালি

মুখে-রঙ রমণীর একচোখের বিদ্রূপ...

#

দূর ঘ্যানঘ্যান-ক’রে গড়িয়ে যাচ্ছে দূরে

কোনও কাছ নেই— শুধু কাছি...

একপ্রান্ত শক্ত মুঠোয় ধরে-থাকা আর

ট্রেনের বগির দুলকির ঢঙে টান-সামলানো...

#

হো-হোটিলোওও...

পাখিরা কিচমিচ করছে— কোথায়? কোথায়? কোথায় গেলে গো?

#

মাঠ ফাঁকা

#

আমার আমি নেই

ওগো, হোটিলো






জার্নি

শ্রাবণী গুপ্ত


নিজের সঙ্গে নিজের এমন একান্ত যে যাওয়া,

যাওয়ার ভেতর ঘুমিয়ে থাকে ঘুম


জ্বলন্ত এক ধূপ, দেখি—

পুড়ছে যেন ভেতর ভেতর

উড়ছে যেন ছাই


সমস্ত আশনাই

যেন নিজের সাথে নিজের

এমন দেখা হওয়ার ধুম


এমন দৃশ্যে অবাক হওয়া, এমন দৃশ্যে শোক

কেননা নির্মোক

জানি মুহূর্তে যায় উড়ে


আমিও কি ছাই বসেই থাকি—

আমার হৃদয় জুড়ে!






বাৎসায়নের ডায়েরি

সৌম্যজিৎ আচার্য


১।

উলের গোলার মতো বুক

তার পাশে লালসা তোমার

ও জিব জাহাজের মতো

ঘুরে মরে ঘূর্ণিঝড়ে -


তোমার মাকে পড়ে মনে...


২।

চুমু খাবার আগে উড়ে আসে ব্যান্ডেজ

মনে পড়ে বেডপ্যান...


তোমার গলার তিলে শিউলি


সে তিলে মানত করি,

ধুনো দিয়ে বলি,

মা যেন হাঁটতে পারে

আবার...


৩।

নাভিতে জলাশয়

সে জলে মুখ নিয়ে আসি

আনি মাথা

ধুয়ে নিই চুল, যাবতীয় তিল...


ও কোমর পাহাড়িয়া পথ

সাবধানে ধীরে ধীরে উঠি

এই সেই বুক, বিভাজিকা

যেখানে গলা থেকে ঘাম

গড়ায় নদীখাতে...

বেজে ওঠে ফোন

ওপারে বাৎসায়ন,

বলে,

তোর মা চলে গেল আজ...






সিদ্ধান্ত

প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী


তোমাকে জীবন থেকে ছেঁটে ফেললাম

তোমাকে জীবন থেকে ছেঁটে ফেললাম

তোমাকে জীবন থেকে ছেঁটে ফেললাম


এ কথা বারংবার লিখে ফেলছি, বলে ফেলছি

কেন? দরকার।


যেভাবে শিক্ষার্থী শিখে নেয়, মনে রাখে পরীক্ষা-বিষয়

আমারও আগামী দিন, পরীক্ষা নতুনতর

অভ্যাস, তোমাকে ছাড়ার...






আগুনের দেশ

সায়ন রায়


সর্বনাশের মধ্যে দিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে সুখের প্রতিটি মুহূর্ত

আমার হর্ষ, আমার প্রেম—বিষাদ বাড়ির বারান্দা

দোলাচল যাকে সংশয় নিয়ে জানিয়েছি ধিক্কার

আজ দেখি তাও ছিল খুব বেশি বেশি স্থির

হাওয়া বয় জোরে ধীরে মৃদুমৃদু হাওয়া বয়

হাওয়া হয়ে যাওয়া থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে

আমরা এই মধ্যরাতে জ্বালিয়েছি খান কয়েক সিগারেট

আমাদের জীবন অন্ধস্কুলে স্বপ্ন আঁকার প্রতিযোগিতা

আমাদের জীবন নিঃস্ব ফুলের গন্ধ বিলোনোর অহংকার

দেখো আর করুণা করো আর মাটিতে মিশিয়ে দাও

আমাদের রাজপ্রাসাদ, জাদুবাগান,প্রাচীন কালের পিয়ানো

ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে হাজার হাজার প্রজাপতি

তাদের রং ও বাহারি আলপনা বসন্ত ডেকে আনে

অদৃশ্য জালে ওদের ধরো, আগুন লাগাও ডানায়

পুড়তে পুড়তে ওরা উড়ে যাক দাউদাউ আগুনের দেশে।





অপেক্ষার থেকে সহজ

তৃণা চক্রবর্তী


একটা নদীকে অবিশ্বাস করে তুমি ঝরনার কাছে পৌঁছলে

ঝরনাকে ভুল বুঝে পৌঁছলে এক পাহাড়ের কাছে

পাহাড়ের গা থেকে বরফ সরিয়ে খুঁজতে থাকলে পাথরের রঙ

পাথরের ভিতর থেকে অনাবিষ্কৃত জলবায়ু


ঝরনার কাছে পৌঁছলে চোখে জল আসে, মনে পড়ে ভালবাসার কথা

এসব কথা এখন সারাদিন তোমার ভিতরে

নদীর জলকে অবিশ্বাস করার দুঃখ, তোমার পিছু নেয়

ভালবাসার কথা ভুলে যাওয়ার কষ্ট, তোমাকে চিনতে অস্বীকার করে


এইসব ভালবাসা, অবিশ্বাস, অস্বীকার নিয়ে তুমি এখন কোথায় যাবে?

তোমার বাড়ি ভেঙ্গে পড়ে আছে অন্য শহরে

তোমার দুঃখগুলো পুরনো ও ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে

এত দূরে এসে গেছ, আর কোনও দূরে যাওয়া নেই


তুমি কি অপেক্ষা করবে তবে, কিছু একটা ঘটার

তুমি কি মেনে নেবে, অপেক্ষার থেকে অবিশ্বাস অনেক সহজ?





যা বলেছি

প্রবালকুমার বসু


বলেছি অন্যের কথা, নিজ বার্তা বর্ণিব কীভাবে

নিবেদন করিনি অতঃ মনোবাঞ্ছা আড়ালে কী ছিল

জন্মলগ্নে নষ্ট সত্য, সেও এক অতিকায় মিথ্যে দিয়ে ঢাকা

সম্মুখে দাঁড়ালে মনে হবে যেন দিগন্তের নিরুত্তর গাথা

এই উপলব্ধি যত উপেক্ষা করেছি কোনো ঔদ্ধত্য বশত

নিরুপায় স্তুতি হয়ে সে কথা পড়েছে ঝরে নির্মোহ শরতে

ভোরের ফুলের মত সপ্রতিভ তবু সন্দেহপ্রবণ

নাগরিক বিষণ্ণতা ক্রমাগত যেইভাবে অলক্ষ্যে উদ্বিগ্ন করে রাখে

বলেছি অন্যের কথা, নিজ বার্তা এর অধিক বইত নয়


Comments


bottom of page