ছাতিম গাছ
এইর'ম প্রচণ্ড গরমের দুপুরে নেশা করতে হবে। শরীর ছেড়ে দেবে, আমি এলে পড়ব তোমার কোলে। অদ্ভুত স্নিগ্ধতা।
"সকাল থেকে খালি পেট আসলে" মিথ্যা বলব তোমায়, প্রেমিকরা এরম মিথ্যা বলে,
"কিরে নেশাখোর! চুল্লু খেয়ে পড়ে আছিস কেন?" তুমি বলবে মিথ্যা রাগের আশ্রয়ে।
প্রেমিকারাও এরম মিথ্যা বলে।
আমরা আশ্রয় নেব কোনো ময়দানের মাঝে দুই হাত ছড়িয়ে থাকা ছাতিম গাছের নিচে। কী অদ্ভুত! তুমি জুঁইফুল কুড়িয়ে এনেছ, ছড়িয়ে দিচ্ছ আমার এলে যাওয়া শরীরে।
তোমায় বলা হবেনা,
জুঁইফুলের গন্ধ আমি মৃতদেহের গায় পাই, আমার মাঝেমাঝে মৃত দেহ সেজে থাকতে ইচ্ছে করে। মা-বাবা প্রচণ্ড ঝগড়া করলে, আমি তাদের পাশে মৃত দেহের মতো শুয়ে থাকি। আমার তোমার কোলে শুয়ে মায়ের কথা মনে পড়বে। খুবই কুৎসিত স্মৃতি, আমি মুখ গুঁজে নেব তোমার কোলে। তুমি, শিশুর মতো হেসে উঠে বলবে "কিরে মাতাল! নেশা হয়ে গেছে?" আমি কিছুই বলব না। বলব না আমি তোমার কোলে মৃত দেহ হয়ে শুয়ে আছি।
এরম করেই বিকেল নেমে যাবে, সন্ধ্যা নেমে যাবে। তোমার ফেরার তাড়া, আমারও... তারপরেও হাজার হাজার বছর ধরে আমরা ছাতিম গাছের তলায় বসে থাকব। একদিন আমরা ছাতিম গাছ হয়ে যাব।
প্রচণ্ড দাবদাহে আবার কোনো প্রেমিক যার তলায় খুঁজবে আশ্রয়
-"সকাল থেকে খালি পেটে আসলে"
বর্ণমালা
সকল বর্ণমালা ভেদ করে ঢুকে যাই বেডরুমে।
এখানে সাদা-কালোর সংঘাতে
আমি,তুমি, আর পৃথিবীপৃষ্ঠ এক হয়ে মিশে যাই।
মিশনের ঘড়িতেও তখন মাঝরাত,
পিচ্ছিল তোমার মীন শরীরে,
ধর্ষক চোখের ছাপ।
চায়ের কাপে এখন
পিঁপড়েরাও কোলোজিয়াম আঁকবে।
আমি তুমি বইমেলা ধরে, পৃথিবীপৃষ্ঠে এক হয়ে মিশে যাই,
তোমার জন্য ধুলোবালি, তোমার জন্য ঘুণপোকা
তোমার জন্য রক্তমাখা মাংসদলার হৃদয়
এসো বর্ণমালা ভেঙে আবার বেডরুমে ফিরে যাই।
চাঁদের আলোয় মৃত্যুকে এসো খুঁজি।
যেই কবিতা কাউকে পাঠানোর না
শান্ত শহরের দিকে তাকিয়ে থাকে ক্লান্ত দু-টি চোখ, যাদের ঘুমের আবরণে ঢেকে যাওয়ার কথা ছিল। কথা ছিল শেষ বসন্ত বিকেল কাটিয়ে নেওয়ার।
এই দু-টি চোখ কংক্রিটের দেওয়ালে প্রেমের পায়মান জারির চিঠি খোঁজে,
নিয়ন আলোয় খোঁজে
ডুবন্ত সূর্যের পরশ,
বিশাল ইমারতের দিকে তাকিয়ে এক চিলতে আকাশ পেলে, তোমায় খোঁজার কথা ছিল যেই দু-টির চোখের।
অথচ এই শূন্যতা
মাদকাসক্ত রক্তজবা লাল চোখ নিজেকে ডুবিয়ে দেয় অন্ধকারে, কৃত্রিম ঘুমের সন্ধানে।
যেই চোখ অন্ধকারে আলোর সন্ধান করে। জানলায় বাবুই পাখির।
আর
শালুক ফুল খোঁজে সে জলজমা উঠোনে।
যেই চোখে শুধু তোমায় দেখার কথা ছিল, সেই চোখ শুধুই দেখে অন্ধকার।
স্বাভাবিক মৃত্যু
আমি মাঝে মধ্যে স্নান করি না, ভাত খাই না, পৃথিবীর সব সুখ ঝেড়ে ফেলে শীতের দুপুরে নিজেকে লুকিয়ে ফেলি চাদরে, জ্বরের মতো একটা মিষ্টি যন্ত্রণা হয়।
দুপুর ফুরিয়ে বিকেল নামে, রাত হয়ে যায় আমি মাঝে মধ্যে আলো জ্বালাতে ভুলে যাই অন্ধকারে পড়ে থাকি, অন্ধকার পরে থাকে আমাকে, আমি আরও গুটিয়ে যাই আরও লুকিয়ে যাই,
অদ্ভুত অপরাধবোধে ভুগি, মাথায় তীব্র যন্ত্রণা হয় মাঝে মধ্যে, আবার কমে যায়,
খুব রাত হলে আমার কানের কাছে কেউ স্পষ্ট করে কথাবার্তা বলতে থাকে, একপর্যায় মনে হয় আত্মহত্যা করি,
আমি অনেক ভেবেছি, উপযুক্ত চিঠি লিখে ফেলব।
আমি মাঝে মধ্যে বুঝতে পারি, আমার পাশেই আমি উলঙ্গ হয়ে বসে আছি, অত্যন্ত কুৎসিত লাগে নিজেকে,
মাঝে মধ্যে একদিন রোজ ঝলমল সকালে, আমার ঘুম ভেঙে যায় বুঝতে পারি দুর্যোগ শেষ, আমার ছোটো ঘরে মৃত্যুর গন্ধ নেই।
আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছি,
স্বাভাবিক জীবন আসলে স্বাভাবিক মৃত্যুর অপেক্ষা৷
মা
একদিন চন্দনের গন্ধে আমার ঘুম ভেঙে গেছে,
ছোটো আলোর রান্নাঘরে তখনও, তোমার শাড়ি ঢাকা পিঠটা নেই।
শ্যাওলা মাখা কলতলায় হঠাৎ বহু মানুষের ভিড়.
কেউপরিচিত,
আমি সকলকে ঠাউরতে পারিনা,
এই ভিড়ের আড়ালেই হারিয়ে গেলে তুমি।
রেখে গেলে একরাশ চন্দনের গন্ধ
মনে হল মৃত্যুর খুব কাছেই তুমি লুকিয়ে আছ কোথাও, মনে হবে রঙিন তেরপল ডিঙিয়ে গেলেই তোমাকে পাব। অথচ মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ঘুরে এসেও দেখব,
শ্যাওলা মাখা কলতলার কাছে তখনও লেগে আছে চন্দনের গন্ধ!
ভালোবাসা এবং ভিয়েতনাম
আমার ধারণা,
তোমার পৃথিবী সব থেকে সুন্দর।
মৃত্যুকে তুমি
চোখের চাউনিতেই মেপে দিতে পার।
তোমার লিপস্টিকে
শহরের ফুটপাথ রাঙিয়ে দিলেই, ক্লান্তিমাখা ঘামের গন্ধে আমার
মায়ের কথা মনে পড়বে না, ভিড়ের মাঝে।
আমি তোমার পৃথিবী থেকে অনেকটা দূরে
একটা কারখানায় বন্দি,
বারকোড-এ লেখা হচ্ছে আমার জাত, ধর্ম,দেশ।
আমি টুক করে তোমার পৃথিবীতে ঢুকতে চাইছি,
আর তুমি চাইছ আমার পৃথিবী।
আমি চাইছি ভ্যালেন্টাইন, তুমি চাইছ ভিয়েতনাম
পিঁপড়ে ১.
শহরের ব্যস্ত ফুটপাথ-এর কোণায়, ঘন্টাখানেক আগে, আচমকা পড়ে যাওয়া আলুর দমের কাই-এর পাশে একটা পিঁপড়ে মরে আছে। পিঁপড়ে দের মৃত্যুতে কারোর কোনো যায় আসে না কেউ তো আর পিঁপড়ে পোষে না,
কুকুর পোষে, বিড়াল পোষে, মানুষ পোষাও খুব কমন। পিঁপড়ে কেউ পোষেনা। রসুন, পিঁয়াজ মাখা ঝোলে
একটা পিঁপড়ে ম’রে পড়ে আছে।
২.
বড় বড় মানুষদের, যান্ত্রিক মিছিল চলেছে রাস্তা দিয়ে, মালিকের পোষ্যরা প্রভুর চরণ তলের দিকে এগিয়ে চলেছে।
"টাকা.....টাকা.....টাকা চাই।"
কলরবে এগিয়ে চলেছে আর তাদের কিছুই খেয়াল নেই। প্রোজেষ্টেরন ক্ষয় হয়না আর। পোষ্যদের পায়ের নিচ দিয়ে, স্বাধীনচেতা একটা পিঁপড়েদের মিছিল চলেছে।
বুট-এর ভয়কে অগ্রাহ্য করে একটা মিছিল এগিয়ে চলেছে, পিঁপড়টার শবদেহ উদ্ধারে।
৩.
শহরে সন্ধ্যা নামলে আমিও এরম পিঁপড়েদের রোজ দেখি। ফুটপাথ ধরে লাইন করে শুয়ে থাকতে।
যান্ত্রিক মিছিলের পথ আটকে মৃতদেহ উদ্ধারে যায়।
বুদবুদ
আমি নিস্তরঙ্গ ঝিলে আচমকা ওঠা বুদবুদ।
অতএব, আমি এখন সবার অলক্ষ্যে জল থেকে মুখে তুলে চাইলেও কেউ দেখার নেই।
সে জল ঝিল না হয়ে নদীও হতে পারে, কিংবা ধরো সমুদ্র?
সমুদ্র’র শুধুই শেষ করা আছে, আছড়ে ফেলবে তার দম্ভর বেড়াজাল।
তুমি,
ঢেউতোলা, আবেগহীন, জেদি সমুদ্র।
যার প্রতিটা ঢেউ জন্ম দেবে হাজার হাজার মৃত্যু।
হয়ত পুরী, কিংবা অন্য কোথাও
হাজার লোক ঘিরে থাকবে তোমায়,
তোমার ধ্বংস, এদের কাছে আমোদপ্রমোদের এক বিশাল বালুচর।
যেহেতু তুমি সমুদ্র,
তাই তুমি জন্মও দেবে অসংখ্য নদীর,
নদীর থেকে আবার জন্ম হবে হাজার হাজার ঝিল,
যেখানে কোনো এক নিস্তেজ একলা দুপুরে
আচমকা বুদবুদ হয়ে জন্ম নেব
আমি।
আমাদের দেখা হবে না কোনোদিন, অথচ
হাজার মানুষের আড়ালেই, আমরা একে-অপরকে জন্ম দেব প্রতিদিন।
যেমন তুমিও মৃত্যুপ্রিয়। আমিও ক্ষণিক।
কবি পরিচিতি
তরুণ কবি অভিজিৎ রায়চৌধুরী, পেশায় একজন আলোকচিত্র শিল্পী, তিনি আর কিছু পারেন না, কিছুই পারেন না, তার কোন গ্রন্থ প্রকাশিত, কবি বই প্রকাশ নিয়ে ভাবেন না, তিনি মাঝেমধ্য সবার অলক্ষ্যে বসে মৃত্যু চিন্তা করেন, কবি এছাড়া কিছুই পারেন না। অভিজিতের সাথে যোগাযোগ করতে হলে মেল করুন roychowdhuryabhijit3@gmail.com এই ঠিকানায়।
Opmerkingen