এই মাসের কবি : পিয়াল রায়
আলাপ পর্ব
দুর্গাপুরে জন্ম, পড়াশোনা ও বড় হয়ে ওঠা। লেখালেখির শুরু খানিকটা মজার ছলেই। তবে সিরিয়াসলি লেখা শুরু ২০১২ থেকে। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ দুটি, "জলের সন্তান" ও "ধূলি থেকে ধূসর"। কবিতার পাশাপাশি দেশ দুনিয়ার খবর রাখা ও গান শোনা খুবই পছন্দ। পিয়াল রায়ের সাথে যোগাযোগ করতে হলে মেল করুন: piyalroy1986@gmail.com এই ঠিকানায়।
কবিতা
ভয় পেয়েছো বলেই কি...?
১)
ঝড়ের ভিতর ভেঙে যাক জেলখানা
স্পর্শেই যাক ছিঁড়ে সব দস্তানা
এত ঝড় আমি দেখিনি কখনও আগে
দেখেছি কেবল দু'চোখের অনুরাগে
ভালোবাসা ছিল, ছিল জন্মের টান
বেদনায় ভারি হৃদয় মূর্তমান
কথা বলো আজ দাও ইঙ্গিত কোনো
বলোনি যা তুমি, কোনোদিন কক্ষণও
তুমিও চেয়েছ আমি যা চেয়েছি তাই
দুইয়ে দুইয়ে এক হয়ে গেছি দুজনাই
২)
শুধু একবার ছুঁয়ে দে চোখের পাতা
শুধু একবার ঠোঁটে ঠোঁট রাখি আয়
যা কিছু আমার চুরি করে সবটুকু
তোর বুকে সুখে লুকিয়ে রাখ আমায়
এটুকুই আমি বলে গেছি বারবার
কী এমন বেশি চেয়েছি... ঈশ্বর
বরফের নীচে ছায়া কেঁপে কেঁপে ওঠে
জমাট আমার প্রতি প্রতিবিম্বর
যে কথা হয়েছে অনন্তবার বলা
ক্ষীপ্র কিন্তু দারুণ নিরীহ প্রেমের
কোথাও কি কিছু হয়েছে আশার কথা
হয়নি, বরং ভেঙেছে আয়না ঢেউয়ের
অবিরাম ঝড়োবৃষ্টির তাণ্ডবে
শুধু তোকে চাই শুধু তোকে চাই আমি
তোর নামে রোজ হৃদয়ে রক্ত ঝ'রে
এত নিষ্ঠুর থাকতে কীভাবে পারিস?
কত মনোরম বসন্ত এলো গেলো
কত কাঙ্খাই ভেসে গেল অপ্রেমে
কীভাবে বলব কোন পথে আছি আমি
হত্যা নাকি মৃত্যুর সঙ্গমে
৩)
ভালোবেসে বলো কী রেখেছো কাছে
তোয়ালেতে ভেজা নরম গল্প আছে?
অথবা আছে কি আমার সে ছবিগুলো
ঝুল-বাতাসের কথা বলা ওই নদীর পাড়ের ধুলো?
আছে কি কোথাও পাহাড়ি নদীর সত্যি
দেহাতি চিবুকে উল্কি ফোটানো বৃষ্টির একরত্তি?
জানি কিছু নেই... রেখে দেওয়া বড় দায়
প্রবল মেঘের বক্ষে লুকোনো যেন কোনো অন্যায়
রক্তের চাপে ফিনকি দিয়ে যে ওঠে চাপ চাপ ধোঁয়া
লুকিয়ে দেখেছি সেখানেই গেছে আমার খুশিও খোয়া
আমি তো রেখেছি ভালোবেসে তার অন্ধগানের বুক
ভয়ানক সুখি চোরাটানে এক সবুজ মেধাবী মুখ
ভেবেছি ঠিকই ছুঁয়ে দেব কচি জলের আঙুল ভোরে
একদিন ঠিক দেখবোই পোষা আগুন কীভাবে ওড়ে
সন্ধে শহরে জাহাজঘাটায় স্বর্গীয় ভুলে কোনো
প্রচণ্ড জ্বরে ভেঙে দেবে বাঁধ শরীরের খোলা মনও
ছোঁবো বললেই ছোঁয়া যায় নাকি?... রোমকূপ পুড়ে ছাই
একদিন কেউ বলবেই, এসো, সমুদ্রে ফিরে যাই
সেই একদিন আসে না এখানে কত চলে যায় দিন
লাশের পাথরে ঢাকা পড়ে থাকে শোকও অর্বাচীন
৪)
কেন বললি না সরাসরি
ভয় ছেড়ে আয় ভালোবাসা চেপে ধরি
কেন বললি না সরাসরি
লাফ দিয়ে ওই আকাশের থেকে
আগুনটা চুরি করি
কেন বললি না একবারও
ভালোবেসে তোকে পুঁতে দেব বুকে আরও
কেন বললি না একবারও
সাঁকোয় দাঁড়িয়ে ফানুস ওড়াবো
ধারবো না ধার কারোও
কেন লিখলি না কোনো চিঠি
হৃদয়ের ভাঁজে ভাঁজ করে রাখা স্মৃতি
কেন লিখলি না কোনো চিঠি
সারা রাত জেগে ভোরের আলোয়
পাঠানো অবাক প্রীতি
কেন ডাকলি না কাকভোরে
বুকের ওপর ধরলি না চেপে জোরে
কেন ডাকলি না কাকভোরে
বললি না পুড়ে ছাই হয়ে যাবো
আলিঙ্গনের জ্বরে
কেন ডাকলি না কোনো ভোরে
কেন জানলি না কী যে চাই
রাত্রির নেশা মায়া হরিণীর ঘাই
কেন জানলি না কী যে চাই
ভীষণ শব্দে ঝাঁপিয়ে পড়ার
কোমল পুরুষটাই
বুঝি জানতি না কী যে চাই
কবে বলবি এবার বল
সংক্রমিত বাহুবন্ধনে চল
কবে বলবি এবার বল
নানান রঙের দেহে জেগে আছে
রেশমী সুতোর জল
কবে বলবি এবার বল...
৫)
মনের ঘরে ঝুলিয়ে তালা রাখতে এসে মন
সর্বনাশী আলোয় পোড়া মিলল এ জীবন...
তোর আমার মেলে না অনেককিছু
তবু ভালোবাসায় মিলেছি দুইজনে
নিয়ম মতোই আমিও চাই তোকে
তুইও আমায় চেয়েছিস নির্জনে
অথচ মজার বিষয়টা হলো এই
কাছাকাছি যাবো এমন উপায় নেই
সবই ঘোরেফেরে বাতাসের ফিসফিসে
জোরালো কোনো শব্দে ওঠে না ঢেউ
আমি অভিমানে থাকি মনটাকে গুঁজে
'ভালো হয়ে ওঠ'...ছুঁয়ে বলে না তো কেউ
রাস্তার মোড়ে নিলাজ ব্যথায় আমি
কী যে ঝড় ওঠে জানে অন্তর্যামী
হে ঠাকুর, বলি হাত করে রোজ জোড়
একবার দেখা করিও সঙ্গে ওর
জেনে নেব কোন ঠিকানায় দিলে চিঠি
খুলে যাবে সব মুখচোরা পরিমিতি
ইশারায় নয়...ইঙ্গিতে নয় আর
সরাসরি চোখে চোখ মিলে যাক চার
তেজি ঘোড়াদের জোড়ালো আস্ফালনে
সুনয়নী শত সূর্য উঠুক জ্বলে
৬)
অন্ধকার আগুনের পাশে ঘর অন্ধকার
চোখের ফিরিস্তি শুনি কী কী দরকার
কোথায় কখন কোন জাদুর গুহায়
কেঁদে উঠে শ্বেতশঙ্খ আমাকে কাঁদায়
বলে, মিথ্যে কেন, এত মিথ্যে চারিদিকে
রাগ অভিযোগ ঘৃণা মাত্রাটাও ফিকে
একা একা কত আর ভালোবাসা যায়
যদি না ধরে ফল বৃক্ষ শাখায়
যদি না কাঁদতে জানে দুপুরের রোদ
যদি না ভাঙতে জানে ভিকিরি প্রবোধ
যা যা ছিল এতদিন, যা যা নেই আর
সব সব ভেঙেছে ছুঁড়ে নতুন আধার
সোনালী রুপোলী মাছ শিশুদের ডানা
কানে কানে দুর্জ্ঞেয় দ্বীপের ঠিকানা
কী যে বলি, ইদানীং কানে কম শুনি
হৃদয়ে রক্তরোধ মগজে অশনি
নৈতিক পতন ইত্যাকার যাবতীয়
পথ ঘোরে পথে পথে সঙ্গে আমিটিও
উঁচুনীচু কবিতাছক খেলতে ভালোবাসি
কবিতার কসম... বড় শূন্য হয়ে আছি
৭)
বহু যত্নে ওপাশে ঘুমোয় ভালোবাসা
আদরে আদরে বৃদ্ধ জোনাকিরা ঠাসা
পলেস্তারা খসে পড়ে ইঁট গায় গায়
অন্ধকারে সিঁড়িগুলো স্পষ্ট দেখা যায়
কিছু সিঁড়ি ওঠে যদি কিছু তো নামবেই
নাঙ্গা পা ল্যাঙটো বুক লাশ তো ঘামবেই
কী ছিল বাড়িতে ওর দরজার পিঠে
মস্ত এক শামুকের স্বপ্ন কাঁচামিঠে
স্বপ্নের জালে পাখি ধ্বস্ত নাগরিক
সময় দেওয়াল ঘিরে টিক টিক ঠিক
কানা পাখি বাঁজা পাখি মূক পাখি সে
ডানা ঝাপটে ধরে এসে নীলচে খড়িশে
উহ্ কী নীল, আহ্ কী নীল শান্ত বিন্দির
মাঝ কপালী সমুদ্র ঢেউ বলল, ঝাঁপ দি?
ঝাঁপ দেবে? এত সহজে ঝাঁপ কি দেওয়া যায়?
সহজে কি দাঁড়ানো চলে নিরেট অপেক্ষায়?
তারচেয়ে এই ভালো এই জানলা খড়খড়ি
হাতের কড়া দাগে টানা দোটানার দড়ি
৮)
একটা দুটো ঝুল-
বাগান বেগনি ভুল
বিষম বিষাগ্নি
আগুনে বৈঠকে
দিচ্ছে রুখা রকে
বিড়িতে টান কি?
ছেঁড়া জিনসের পকেট
আকাশ ছোঁয়া রকেট
এই তো সেদিন উড়ে
দুনিয়া ঘুরে ঘুরে
নীলচে ধোঁয়ার সুরে
মরল কেবল পুড়ে
কিনতে গিয়ে নাম
জুটল যে বদনাম
যুদ্ধ হলো ঘোর
ফুরিয়ে যাওয়া রাতের
প্রবল রক্তপাতে
গুঁড়িয়ে গেল ভোর
উপচে পড়া ভিড়ে
জীবনটাকে ছিঁড়ে
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ঠেলে
বিশুদ্ধ সেই জল
শুদ্ধতম তল
চিবোয় বেয়াক্কেলে
তারিখে ওই ঢাকা
বরফে দিয়ে চাপা
হুকুম হল জারি
দান দিয়েছে পাশায়
সর্বনাশের আশায়
নেত্রহীনা বাড়ি
৯)
ব্যাখ্যা অনেক হতে পারে ওর
কিন্তু শেষপর্যন্ত
সবই ব্যাখ্যার অতীত
লাগিয়ে ধ্বন্দ
নিরিবিলি রোজ রাতে
গোনে আকাশের তারা
ঝালে ঝোলে অম্বলে ঘোর
বাঁচতে এসে রইল মরে যারা
ঘোর কলিকাল হায় কলিকাল
রটল চতুর্দিকে
হাততালি আর হাতের তালির
পড়ল কালি ছিটে
ভরসাহীনা শুকনো ঊর্ণনাভে
উফ সহজে হায় সহজের ভাবে
১০)
ভয় পেয়েছ বলেই ভালোবাসলে না?
ভয় পেয়েছ বলেই কি একটু জোরে হাসলে না?
কাছে কাছে একটু কাছে আসলে না?
ভয় পেলে তাই ভাঙলে না তটরেখা?
ভয় পেলে তাই রইলে পড়ে একা?
মনমোহনায় এক্কেবারে একা?
আর দুটো পা, একটু দূরে সাগর ছিল খোলা
হৃদয় জুড়ে হাসির তালে প্রতিধ্বনি তোলা
মনের মতো বৃষ্টি ফোলা ফোলা
ভয় পেলে তাই আঁকড়ে ধরলে জোরে
ভয়েই বড্ড হাঁটলে হিসেব করে
ছিনিয়ে জীবন মরলে পড়ে পড়ে