top of page

এই মাসের কবি : পদ্মাবতী রায়চৌধুরী

1589878873367_IMG_20191202_155911.jpg

পদ্মাবতী রায় চৌধুরীর জন্ম ১৯৮৯ সালের ২৩শে এপ্রিল ৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সাম্মানিক স্নাতক ৷ ২০১১ এবং ২০১৮ সালে রবীন্দ্রসাহিত্য ও কথাসাহিত্যে দুবার স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ ৷ দীর্ঘ দশবছর ধরে বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন ও সংবাদপত্রে নিয়মিত গল্প,কবিতা,ও মুক্তগদ্য লেখালেখি এবং ২০১১ সাল থেকেই সম্পাদনা করছেন "সময়...23:59" সাহিত্য পত্রিকা ৷ অশোকগাথা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার দুটি গল্প সংকলন "রাতজাগা নীল বৃষ্টিরা"(২০১৮) এবং "মার্কাস স্কোয়ারের বাঘিনী" (২০২০) ৷ পদ্মাবতীর সাথে যোগাযোগ করতে হলে মেল করুন:

roychoudhurypadmabati@gmail.com

কবিতা

সংসার

 

এই যে, বুকের ভিতরে রাত জেগে উঠছে...ইচ্ছে করছে তুমি তাকিয়ে থাকো আগের মতই...অপলক আদরে...

 

এই যে, রাতের ভিতরে চাঁদ জেগে উঠছে...তুমি যাবতীয় দরকারী কথার মালা সাজিয়ে রাখছ ক্লান্তিকর শেষ বাসের হলুদ আলোর নিচে ৷ আর আমি জানলার কাঁচে এলিয়ে পড়তে পড়তে ভাবছি...পথে নেমে বাজার করতে হবে...কি রাঁধি আজ ? দুজনেই জানি...রাত পার হয়ে এলো...অচেনা হওয়ার সময় এগিয়ে এলো ৷ তবুও দুজনেই ভিড় বাঁচিয়ে গরম উনুন ভাবতে বসি ৷ আহারে জারিয়ে ওঠে রাতের রোদ...সামান্য ডালভাত আর নুনজ্যোৎস্নায় ৷

 

এই যে, চাঁদের ভিতরে ঝুলবারান্দায় আমি এলোচুল বেঁধে নিচ্ছি...আর তুমি জোছনায় পেতে বসেছ অগণিত ধারের ধারালো হিসেব ৷ আচমকা আঙ্গুল তুলেছি মধ্যযামে ৷ মেঘচাঁদে কেমন জোয়ার এসেছে দেখ ! এই কালো,ওই আলো ৷ চাঁদের বুকে চিরুনি চালায় কলঙ্ক...অন্ধকারকে বলছি,যাবতীয় প্রশ্নই একসময় উত্তরদিশায় যায়...দেখার চোখ বদলাও ৷

 

এরপর,

তুমি উত্তরমুখী মুখ তুলে চাঁদের আগলে চোখ রাখবে...আর আমরা একটা যৌথখামার জন্মাতে দেখব ৷ একটা চিরঅস্বীকৃতির স্বপ্নের যৌথস্রোত ৷ তোমরা তাকে জোয়ারজলের ভুলস্বর্গ বলো...আমরা বলি...জ্যোৎস্নাসম...অপাপবিদ্ধ...

ধী

 

যেকোনো আগুনেই ধীরে ধীরে ধী জ্বেলে

ঘি ঢালতে হয়...

তারপর মন থেকে তোমার

পুরুষআঙ্গুল যেদিকে ঘুরেছে,

শিখাটুকু নারী হয়ে শিহরণে এঁকেবেঁকে

সে আঙ্গুলে আঙ্গুল ছোঁয়াতে চায় ...

শীৎকারেরা ঘন নীলে নীল ছড়ায়,

বাতাসের ধূলি ধূলিকণায়...

 

আসলে আগুনও যে তোমার ইশারায়

নেশারুর মত ব্যথা পেতে চায়,

শুধু ...

যেকোনও আঙ্গুল ধী দিয়ে আগুনের বুকে ঘি জ্বালতে জানেনা...

 

আর

 

তোমার আঙ্গুল তো এখনও,

আগুনের ঠিকানাই জানে না ৷

দহন

 

যজ্ঞের আগুনের দিকে চেয়ে দেখেছ কখনও ?

চিতার আগুনের দিকে ?

ঘৃণার আগুনের দিকে চেয়ে দেখেছ কখনও ?

আদরের আগুনের দিকে ?

সব আগুনেই নতুন একটা জন্ম হয়…

শুধু,

আগুন এখনও মনের মত ব্রাক্ষ্মন পায়নি…

অথবা ডোম…

যে কিনা আগুনকেই পুড়িয়ে মারতে পারে দহনে ।

ভ্রম

 

চাঁদের এপিঠ নয়,ভ্রম দেখছ আসলে...

আলকাতরা জীবনে ডুব দিতে দিতে রোজ বুঝছো,

অক্সিজেন দরকার৷

তোমাকে...

তোমাকে ভীষণ দরকার...

সুড়ঙ্গের শেষে একটু আলো থাকা দরকার...

ভেবো না...

কিছুক্ষণ পরেই ভালো হয়ে যাবে জোছনা,

হাসতে থাকবে জীবনের অভিনয়ে...

শুধু চাঁদের ওপিঠ দেখতে চেও না কখনও৷

অভিসার

 

সন্ধ্যায় তাকিয়ে তাকিয়ে আমাকে অপমানে গলে যেতে দেখলে...শুনে ফেললে আমার অহঙ্কারের আড়ালের ফুটিফাটা দরমার বেড়া৷অথচ মাঝরাতে অতর্কিতে ফুঁপিয়ে উঠলে,ব্যথায় নীল মাথায় হাত রেখে বললে,"আমি বুঝি...আমি বুঝি...তুমি নির্দোষ ছিলে তখনও,আমি জানি…"

 

এমনিসব রাতে বাঁশরী বাড়ির ঝুল বারান্দায় বসে উপগুপ্তকে বুকের ভিতরে নিতে ইচ্ছে করে প্রবল জ্বরে...ভুলে যাওয়া বাসবদত্তাকে মনে পড়ে...এপাড়েতে বাউলগান ওপাড়েতে মহাশ্মশান...ঈড়া-পিঙ্গলার মাঝখান বরাবর চাঁদধোয়া কোপাই,ভিতরে জোয়ার নিয়ে...একা জেগে বসে থাকে৷সুষুম্নারেখা ছেদ করে যায় রুরু ভৈরবের চর৷মাথার উপর ঝুলন্ত আগুন প্রশ্ন করে ওঠে...

 

কবে যেন উপগুপ্তর সাথে শেষ দেখা হয়েছিল!কবে যেন ভালোবাসা নগরী পার করে,এই মৃত্যুমুখীর মাথা কোলে নিয়ে,ঠোঁটে ঢেলে দিয়েছিল জলরেখা!আজ তুমি ঠিক সেভাবেই যথেচ্ছ পরাজয়ের পরেও অন্যায়ের চোখে চোখ রেখে বললে,

"আমি নির্দোষ...তুমি জানো…"

 

শুধু হাওয়া জানে...রাত জানে...আর বোতামবিহীন ভুবনডাঙার চর...আজ রাতে উপগুপ্ত এসেছিল গোকুলে...অভিসারে…

ছায়া

 

বছর দুয়েক আগের জুলাই…

ঝিরঝিরে জলের নিচে

রাস্তার এপার ওপার…

শেষ দেখা ।

 

তারপর…

অপারেশন টেবিলের জোরালো আলো

ছুরি কাঁচির ঝলকানি,

প্রতিটা নতুন সম্পর্কের মৃতদেহের

পাশে বসে বসে দেখছি,

বৃষ্টিভেজা রাতে তোমার হেডলাইটের আলো

জ্বলছে...নিভছে…

 

আর

কারফিউয়ের অন্ধকারে সার্চলাইটের আগুন,

আমার আত্মাটুকুকেও ঝলসে দিচ্ছে…

বারবার…

অসীম

 

উতরোল আঁচল আর দুচোখের কাজল দেখে,

উছলে ওঠা হাসি আর ভরা যৌবন দেখে,

যারা কাছে এসেছ,

তারা জেনে যাও…

আমাতে নারী নেই পুরুষও না ।

একটা আড়ালের আলো আছে…

আগুনের মতো...প্রেরণার মতো…

অথবা,

মায়ের মতো ৷

বিশ্বাস

 

সহস্র আগুনের নদী পেরিয়ে আসার পর

একবার প্রমাণ হওয়া উচিৎ

আমার বিশ্বাস

পাথর থেকে তোমাকে

বানিয়েছে ঈশ্বর

তারা

 

মাঝেমাঝেই যদি মধ্যরাত্রি প্রশ্ন করে ওঠে,

ও কে ? ও কে ? ও কে তোমার ?

তাকে বোলো...

 

আমাদের মাঝে জল আর হাওয়ার সম্পর্ক

আলো আর আকাশের সম্পর্ক

মাটি আর অঙ্কুরিত বীজের সম্পর্ক ।

মাঝরাতে আচমকা বিজলি চলকালে

অঝোর ছাদে ভিজতে ভিজতে,

আমরা একে অপরকে বলি…

ঝড় আসছে দেখেছ…

একটু বারান্দায় আসবে ?

 

আমাদের মাঝে  কোনও সম্পর্ক নেই

যা আছে তাকে দেখতে হলে,

চোখে বিশেষ তারার মণি লাগে ।

অনুপ্রবেশ

 

তোমার ঘুমন্ত মুখে আলো খেলা করে,

তুমি জানো না...

চিবুক থেকে গড়িয়ে পড়ে রোদ ৷

রোম রোম বুকের ওঠাপড়ায় মায়াযুদ্ধ চলে,

তুমি জানো না ৷

চুলের ডগা থেকে স্নানজল ঝাড়তে ঝাড়তে,

আঙুলের রেখা থেকে গরম ভাতের

গন্ধ মুছতে মুছতে,

অন্ধ বারান্দায় ভিজে ভিজে

পাঞ্জাবীর জলের টুকরোতে,

নিষিদ্ধ গহীনে নামতে থাকা

খণ্ড খণ্ড বৃষ্টি হয়ে,

তোমার যাবতীয় ক্রোধেরাও

আমাকে ভিজিয়ে দিয়েছে,

তুমি জানো না ৷

 

আমরা একে অপরের

পাপ ক্ষমা করতে করতে,

আদর আর অবহেলার

আলোজলে গলে যাচ্ছি,

তুমি জানো না ৷

 

আমার অবৈধ দৃষ্টিতে তুমি সোনা হয়ে গেছো...

তুমি জানো না…

আলাপ পর্ব

bottom of page