top of page

এই মাসের কবি : মৌসুমী ব্যানার্জী

আলাপ পর্ব

WhatsApp Image 2021-05-30 at 7.21.35 PM.

আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের বায়োস্ট্যাটিসটিক্স-এর অধ্যাপক ড: মৌসুমী ব্যানার্জী, গবেষণার বিষয়বস্তু ডাটা সায়েন্স এবং ক্যান্সার । জন্ম  এবং লেখাপড়া  কলকাতায়। কর্মসূত্রে বিশ্বনাগরিক। লেখালেখির শুরু কলেজ জীবন থেকেই। মৌসুমী মূলতঃ কবি, কিন্তু  কবিতার পাশাপাশি ছোটগল্প এবং প্রবন্ধও  লেখেন। বাংলা লাইভ , পরবাস, ইরাবতী,  কেয়াপাতা, সাহিত্য ক্যাফে, বাতায়ন,  সুইনহো স্ট্রিট, গল্পপাঠ, TechTouchটক, Antonym  ইত্যাদি বহু পত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ:  একলাঘর। http://www.mousumibanerjee.com/
 

কবিতা

না হওয়া কথোপকথন

 

---- জানো, আজ আমি আকাশে মাদুর পেতে বসেছি

           আলো দেখবো বলে।

------ আকাশ ভরা তারার আলো?

------- দূর, তুমি যেমন বোকা!

           আলোয় বসে আলো দেখা যায়?

------- তবে?

------- জোনাকি।

দেখো, বনে বনান্তরে মিলিয়ে যাচ্ছে।

------- সে তো আলোর মৃত্যু অন্ধকারে।

তোমার ভালো লাগে?

------- আচ্ছা বোকা কিন্ত তুমি!

              দেখছো না, 'কেন', 'কিন্ত', 'যদি'গুলো

                  মিলিয়ে যাচ্ছে জোনাকির পিঠে ভর করে!

                       একে তুমি মৃত্যু বলো?!

 

 

জীবন ক্যালকুলাস

 

জীবনের সঙ্গে জীবন সম্পৃক্ত করে বাঁচা 

       এ বড়ো সুখ 

          অনির্বচনীয় পাওয়া।

সুখ বাড়তে বাড়তে একদিন

    limit going to infinityর মতো

       যন্ত্রণার নীল চূড়া।

জীবনের সঙ্গে জীবন সম্পৃক্ত করে বাঁচা

      এ বড়ো যন্ত্রনা।

 

যাঁরা এই কারণে বলেন,

     জীবনকে অমন জড়িয়ো না 

         শ্বাসরোধ হবে,

তাঁরা ক্যালকুলাস'টা

      ঠিক মনন দিয়ে বোঝেননি।

 

 

 

 

 

সম্পর্ক

 

এক একটা সম্পর্ক

    ছাড়া শাড়ির  মতো।

অনুষ্ঠানের পরে 

    এলোমেলো ভাঁজ শুদ্ধ ছড়ানো থাকে

      বেশ কিছুদিন,

চেয়ারের গায়ে,

কিংবা আলনা'র এক কোণায়।

আর আলনা থেকে পাট পাট ভাঁজে

আলমারিতে তোলার সময়ও

    পুরোটা জুড়ে

       মানুষটা'র গন্ধ।

 

 

 

 

 

পুরিয়া কল্যাণ

 

তোমার প্রতিদিনের নতুন ভোর

     আর হাক্লান্ত রাতের কিছুটা সময়

        আমার ছিল

তাদের ফিরিয়ে দিলাম।

 

যত্নে রেখো

  চায়ের টেবিলে ভাগাভাগি আনন্দবাজার।

যত্নে রেখো

  ফুটপাথে বেলফুল

     আর অল্প শীতে টানাটানি আলোয়ান।

       

মসজিদের দরজায় রাতের পাহারাদার

      তাকে যত্নে রেখো।

 রাজপথে কুলফি ফালুদা

    আর ঘুমন্ত শিশু

       তাকে যত্নে রেখো।

 

 আকাশছাদে মেঘ করেছে আজ

   মাথার ওপরে তিন পয়েন্টে পাখা

 তোমার কাছে পৌঁছেছিলাম

     গাছ পেরিয়ে গাছ

 আজ আয়না জুড়ে কুরুশ কাঠির ঢাকা।

 

 

মনভাসিয়া,

  মনে পড়ে না

    শেষ কবে তোমায় বলেছি

      আমার পুরিয়া কল্যাণ দুঃখগুলোর কথা।

 

 

একলাঘর

 

শুদ্ধসারং 

আমার একলাঘরে আজ মধ্যদুপুরের

                               একফালি আলো

তোমার হয়ে সে এসেছে আজ আমার কাছে।

প্রথমটায় আনমনা, অস্থির, এলোমেলো

কখনো বসছে পড়ার টেবিলের চেয়ারটার হাতলে, কখনো হারমোনিয়ামের মধ্য সপ্তকে,

তারপরেই দৌড়ে বারান্দায় মেলা মেঘলা শাড়ীটার গায়ে।

                                এদিকে আমি

সেই যে শীতের হাওয়া খুব আদর করে দিয়ে গেলো কপালে, ঠোঁটে, কানের পাশের অলক-এ

সেই থেকে জ্বর আমার আর সারে না

মনে মনে জানতাম

                              আজ তুমি আসবে

তাই অলিভ-চন্দনের তেল মেখেছি গায়ে, আর গোরার সুচরিতার মতো পরেছি লম্বাহাতা শীতের সেমিজ

সারা শরীরে চন্দন আর জ্বরের গন্ধ মেখে

                             অপেক্ষা শুধু তোমারই জন্য।

 

 

 

 

গৌড়সারং

তোমার হয়ে এলো

               দুপুরের আলোটা

ঘরের আনাচে কানাচে ঘুরতে ঘুরতে সে টুকিটাকি গল্প জুড়ে দিলে,

সকালে চোখ মেলেই কাকে ভাবলে তুমি?

কেন, শিশির ঝরিয়ে কাল রাতে বেহালায় নীলাম্বরী বাজালে যে!

মিথ্যে, মিথ্যে, মিথ্যে ------ সে সুর লেপে লেপে

              অবয়ব গড়েছ তুমি।

              কার, বলো ?

আলো আমার আলো, তোমায় বলবো কেন বলো ?

ঠোঁট ফুলিয়ে সে বললে, বাহ্, সময়কে দাঁড় করিয়ে রেখে তোমার কাছে এলেম যে, তার বেলা?

এই বলে সে আমার খোলা চুলে বিলি কাটতে থাকলে।

 

 

 

 

পূরবী

মধ্যদুপুর গড়িয়ে গড়িয়ে একলাঘরে

                          পড়ন্ত বিকেল এল

আলো তখন মান্দারমনির সমুদ্রটির মতন

সরে যেতে যেতেও

                        ছুঁয়ে আছে আমাকে, আমার সমস্তকে,

যেন শূন্য বালুকাবেলা। এরপর পিদিম জ্বললো কোথাও, শাঁখ বাজলো কোথাও,

আর পুরিয়া কল্যাণের আলাপ যখন শুরু হলো কোথাও

আমরা দুজনেই জানলেম

                       এবার ফিরতে হবে তাকে

চুপি চুপি বললে সে, দেখলে তো, তোমার জন্যে খুলতে পারি কত্তোখানি হাতের মুঠো!

আর আমি তখন ডান হাতের মুঠিতে তার জন্যে ধরে রেখেছি সন্ধ্যারতির হোমের হাপ 

খুলি কেমন করে মুঠি?

 

 

 

 

 

হেমাবতী

পুরিয়া কল্যাণের ঝালায় যখন মধুরাতের নিবিড় আনন্দ  আর বেদনা মিলেমিশে একাকার

                         তখন ফিরিয়ে দিলেম তাকে

আহত দৃষ্টি মেলে আলো বললে আসতে বলছো না আবার?

জানি, প্রাত্যহিকতায় ভারী অনাসক্তি তোমার, তবু আসতে ইচ্ছে করে যে বড়

ফিরিয়ে দিও না আমায়!

ওগো আলো, যত ফিরিয়ে দিই তোমায়,

                         ততো যে আমার চাওয়া বাড়ে!

 

 

 

 

 

আভোগী

সে চলে গেলে আমার নিবদ্ধ আঙুলের ফাঁক দিয়ে

                            চুঁইয়ে চুঁইয়ে রাত্রি এলো

বারান্দায় দাঁড়িয়ে তারাদের মীড় দেখলেম খানিক

যখন ভেতরঘরে এলেম, দেখলেম বেতের ঝুড়িতে তোমার হয়ে আলো রেখে গেছে

                           অনেকখানি সময় 

                           সঙ্গে ভোরের তোলা কাঠালিচাঁপা !

 

 

 

এর চেয়ে অন্ধকারে ডুবে যাওয়া ভালো

 

এর চেয়ে অন্ধকারে ডুবে যাওয়া ভালো।

এই নিরন্তর

একের জায়গায় অন্যকে বসিয়ে দেওয়া,

এই নির্লিপ্ত

    ভালো আছি বোধে

        বয়ে যাওয়া।

জীবনের সমীকরণে

     random variable হয়ে বাঁচা।

পরিমাপ মতো নাড়াচাড়া

     ছুঁয়ে থাকা

দায়হীন হোয়াটসএপ, এসএমএস বিনিময়ে

    ভালো রাখা,

আর জীবনের খুব বেশি কাছাকাছি গেলে

     মৃতবৎ একা ফেরা।

আপৃথিবী বিতত বিতংসের মাঝে

    দমবন্ধ হয়ে

    এক বারান্দা রোদ্দুর খোঁজা।

এর চেয়ে  ঢের ভালো

    অন্ধকারে

          অন্তঃস্থলে

              ডুবে যাওয়া।

bottom of page