ঘোর
অনুপমা অপরাজিতা
লেগে থাকে সুখ
জেগে থাকে শোক
এই চোখ মাছ
ঠিক যেন মৃত
লোনা ভোর রাতে
কেঁদে কেঁদে জাগা
ফিরে আসে বাঁক
তবু পথ নেই
ছায়া শুধু ছবি
মায়াটুকু লীন
তীব্র শূন্য বুক
চুরি করে হাসে
দেখে নেয় বিভা
ঘোর লাগা ঘ্রাণে।
হিসেব
নূর কামরুন নাহার
ধরে নেই তুমি এগিয়ে গেছো অনেকটা
অথবা ধরো অনেকটা নয় খানিকটা।
ধরো, আমি পিছিয়ে গেছি খানিকটা
অথবা ধরো খানিকটা নই অনেকটা।
তুমি সামনে আছো বলেই কি আমি পেছনে,
অথবা আমি পেছনের বলেই তুমি সামনের?
এখন দেখো এই উত্তরটা বেশ জটিল
কেন তুমি, কেন আমি!
তবে এই হিসেবটা আবার বেশ সোজা
কেউ সামনে বলেই কেউ পেছনে
কেউ পেছনে বলেই কেউ সামনে!
অপরাধ
জাহানারা পারভীন
এক চিলতে বারান্দার দোতলা বাড়ি;
বাড়িতে আসা যাওয়া দখিন হাওয়ার
আর আসত চড়ুই
ছানাপোনাসহ চড়ুই শিকার করতেন মা
নিভিয়েছেন রান্নাঘরে বাস করা ক্ষুধা
বন্ধ দরোজা, জানালা, ঘুলঘুলি
পাখিদের ছুটোছুটি আর্তচিৎকার
এখনও মনে আছে মায়ের নিষ্ঠুরতা
শিশু সন্তানের পাতে মা তুলে দিতেন
পাখি মায়ের বুক, ডানা, কলিজা,
যার সন্তানেরা তার জন্য অপেক্ষায়,
বাড়ির পাশের গাছে
গ্রিলে বসা চড়ুইয়ের কাছে ক্ষমা চাই
আমার মায়ের অপরাধের
চোরাবালি
সুহিতা সুলতানা
চেয়ে দেখি কোনো মায়া নেই
কেবল আগুনের ছায়া। এখন
অস্তিত্বের ভেতরে বিবর্ণ রঙের
খেলা শিল্প ও বোধের সমূহ
সংকট। রক্তের রঙের সাথে
উঠে আসে ধূসরতা। ক্রোধ
ধ্বনি ও অগ্নি পরমায়ু খেয়ে
ফ্যালে। আজকাল টেলিফোন
জলে ফেলে দিতে মন চায়
সর্বত্র নির্বিকার পরাক্রান্ত
চোখ ওৎ পেতে থাকে। তার
সকল কীর্তি জলে ভেসে যায়
চিত্রকলার ভেতরে মৃত্যু খেলা
করে। সে কি কেবলই জলরঙ
নাকি জলের কাতরতা? শুধু
মনে মনে ভাবি মানুষ কেন
পশুর চেয়ে অধম কেন খুঁটে
খায় অপরাহৃ কাল? কে জানে
কত ভালো দহনে জ্বলে মনের
যত ক্রোধ। শাদাদের ভীড়ে যে
মরে সে চিরকাল মরে। ঈর্ষার
নদীতে ভেসে যায় রাতের মোম
ক্যানভাস, ইজেল ও প্যাস্টেল।
কবিতার নগ্ন পাণ্ডুলিপি
ফারহানা রহমান
সম্পর্ক আমাকে স্পর্শ করেনি কখনো
আমি শুধু গন্তব্যের কাছেই গিয়েছি বারবার
যেমন করে অনেক পথ হেঁটে আসার পরেও
কেবলই বিভাজন রেখে যায় রেখা
তোমার আমার এই দীর্ঘ অনুপস্থিতির দিনে
অতীতের সব সুতো ছিড়ে দিয়ে নিজের অজান্তে
হারিয়ে গিয়েছি শুধু প্রস্থানের দিকে
সেই কবেই তো সংশয় আর গোপন আঁধারে
ক্রমাগত ভরে উঠেছে কৃষ্ণগহ্বর বেআবরু চোখের পর্দায়।
এই পথ ভুল ছিল জেনেও
তীব্র অনুরাগে বপন করেছি অন্ধের বিশ্বাস,
নিষিদ্ধ স্বপ্নের বীজ থেকে
শোক জিয়িয়ে রেখছি গাঢ় অন্বেষণে বুকের অলিন্দে
বেদনার গোপন গভীর প্রকোষ্ঠের ঋণে।
জেনে গেছি নাড়ির ব্যধিতে
যখন শুধুই বৃত্ত এঁকে দেয় নদী,
শূন্য করতলে নিমজ্জিত হয় সব আশা
তখনো আদিম হাওয়ার ভেসে আসে কর্পূরের গন্ধ
স্তব্ধ দ্বিপ্রহরে বিষাদের নীরবতা
আর তার বাঁকে বাঁকে মোহনার মুখে
লিখে রেখে গেছি নিদারুণ যত কবিতার এক নগ্ন পাণ্ডুলিপি...