আবহমান
শ্রীপর্ণা গঙ্গোপাধ্যায়
আজন্মের নৌকো জলে নামতে না নামতেই
ব্যথার ভেতর, জ্বরের ভেতর
সহজে ফেলে দিলে।
পুড়তে পুড়তে সাজিয়ে নিলাম
কাঠের পর কাঠ
চিতাভস্ম ছড়িয়ে গেল
অমেয় জলতলে
তৃষ্ণা হলাম আকণ্ঠ তোমার।
কষ্ট, ক্ষত চিহ্ন নিয়ে জন্মাব আবার
তৃষ্ণা হব
আবার ফেলে দিলে ।
ভিতরমহল
সায়নী মুন্সি
হঠাৎ কেমন ছন্দপতন যেন!
সুর বাজছে জলদগান্ধারে
বুকের মধ্যে লাভাস্রোতের মতো
বইছে রাগ- আস্তে এবং ধীরে।
সত্যিই তুমি বর্ণচোরা এক;
ফোন কাটছি, সুযোগ বুঝে বুঝে
মেঘের মতো শব্দ করো কেন?
স'রে পড়ছি নিজের রাস্তা খুঁজে।
এরপরেও কি রিফু করাতে চাও?
মুখটা তোলো, ভেতর ঘরে যাও।
পরিপাটি করে চুল বাঁধা হলে
পিতৃপ্রতিম কবি অক্ষয়চাঁদ স্মরণে
সুরজিৎ পোদ্দার
শেষ বিকেলে ডাউন ট্রেন চলেছে ঢিমে চালে
চুল বেঁধে নিচ্ছে প্রাচীন বারান্দা, গায়ে তেলের
গন্ধ, এখানে ইন্টারনেট আসেনি এখনো, শান্ত
হাওয়া আর মরচে পড়া রোদ ভাঙা রেলিং
আর চাতালে, কাদা জমে আছে, মৃত ঈশ্বরের
চুল, জামা, খড় আর কচুরিপানা এক ঘাটে
জল খায়। মাঝে চড়াই আসে, নরম লাল পা
নিয়ে থমকে থমকে আসে ঘুঘু, পায়রা, কাক।
সারাদিন রোদে পুড়ে কালো এক ঝাঁক - বিকেল
শেষ হলে ছায়া পড়েনা এ'জলে, আলো আসে না
একে একে ফিরে যায় সবাই ডাউন গাড়ীতে
পরিপাটি করে চুল বাঁধা হলে।
দিগন্তের কাছে এসে
তৃণা চক্রবর্তী
কী লিখব
আমাদের মধ্যে থেকে কথাগুলো
রোজ রাস্তা পাল্টায়
এ এক প্রণালী
গভীর, ভিতরে অনেক নীচে
চাঁদের ছায়ায় ভেসে আছে ঝাউপাতা
দীর্ঘক্ষণ
এই একটাই ছবি
কোনও ঘটনা নেই, শুধু অপেক্ষা ছাড়া
কী লিখব... অপেক্ষার কথা ?
গলির কথা
সংহিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ভয়ঙ্কর কানা গলির মতো , সে এক ,
সার্পেন্টাইন লেন।
তার শেষে , এক সাপুরিয়া , মায়াবতী অর্গান বাজাতো এককালে ।
দেওয়ালে দুলতে দুলতে, সাপ , আর
গুলঞ্চ লতায় জড়াজড়ি !
শঙ্খ লেগে যায় ।
আলোর পর অন্ধকার ক্রম জেনে, আমাদের সেই গলিতে যাওয়া ।
এবং চুরমার , এবং রাজ্যপাট !
দুরূহ দুর্বার বেমিশাল!
তখন কানা গলির শরীরে ,
কুসুম তেলের গন্ধ ।
নজরে নীলিম বন্দিশ !
ঘোর লেগে যেত । অকারণ বাস্তু খেলা । বিরহ নির্দেশ !
সে গলি পেরিয়ে এসেছি , এ কথা বলতে পারিনি কখনো।
এখনো মাঝরাতে বুকের লুকনো কম্পাস ,
পথ হাতড়ে যায় ।
অনেকেই হারিয়ে গিয়েছিলাম । কেউ কারো ঠিকানা রাখিনি ।
একটা গলি ছিলো , আঁকা বাঁকা সার্পেনটাইন লেন ।
ঘুমচোখে মনে হতো, আলো আছে !
পথ দেখাবার ।