top of page

এই মাসের কবি : কুণাল বিশ্বাস

WhatsApp Image 2021-02-28 at 1.28.31 AM.

আলাপ পর্ব

কবি বিনয় মজুমদারের স্মৃতিপুষ্ট ঠাকুরনগরে বাড়ি। প্রেম: কলনবিদ্যা, অভিনিবেশ— কবিতা। এর আগে 'এই সময়' কাগজে রিপোর্টাজ ঘরানার কিছু গদ্য, 'কৌরব অনলাইন' ও 'এই সহস্রধারা' পত্রিকায় কয়েকটি গল্প, 'ভাষালিপি' পত্রিকা এবং 'চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম', 'আপনপাঠ' ও 'চলভাষ' ওয়েবজিনে গুচ্ছ কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত কবিতার বই: ভ্যান গঘের প্রিয় রঙ (ভাষালিপি)।
 

কবিতা

অনুষঙ্গ

 

ছিন্ন হও প্রেম— আমাকে সুযোগ দাও

এসো গান করি

বাতাবিসকল, পটভূমি জুড়ে ভোরের প্রথম ফুলকপি

আনাজ, বাসনজল, তামা— সকলেই খুঁজে নেয় আলো

 

তোমাকে এককথায় প্রকাশ সম্ভব নয়

জামরুল তলায়, প্রসূতি সদনের ছাদে মেঘ করে আসে, দ্যাখো

ঘামে ভেজা শরাফত আলির কবর... ফুটে আছে ঘুম

আমরা সকলে আজ ধীবরচরিত পড়ি

 

এই পথে আসে গাড়ি, পৌরাণিক চাকা, দেবতার ফল

... ঈশপের গল্প থেকে করোজ্জ্বল রোদ

ছাঁচি পেঁয়াজের কথা ভেবে চোখে জল আসে

 

 

 

 

 বাঁক

 

সুখচাঁদ, ভুলে যাও বৃথা অভিমান, রাগ

একদা তোমার বন্ধুদের প্রতি

মনে রেখো তারাও কখনো পড়েছিল বাশোর কবিতা

অশ্রু, ছাপাখানা, হোটেলের লেবুডাল শেষে

হাইকুর স্তব বলেছিল জনে জনে ডেকে

মাসকাবারির ছক কষে দিয়েছিল

নির্জলা দুপুরে, কুণ্ঠিত মেসের বারান্দায়

দ্যাখো, শিউলি তলায় কুসুম কুড়িয়ে ঘরে

ফিরে যাচ্ছে পুতুলের মাসি

কুলপুরুতের মতো শীর্ণ হাওয়া দিচ্ছে আজ

সকাল থেকেই

বলো সুখচাঁদ, কেন এত অনুযোগ

তোমার প্রাণের 'পরে কী-এমন গূঢ় সন্ধি

লিখে দিয়ে গেছে ওই ঝাঁঝালো রাত্রির আলো

যে তুমি বেশ্যাগমন  ভুলে আজ ক্যারম খেলেছ

 

 

 

 

 হারমোনিয়াম

 

তোমাকে ভাবার দিন শেষ হয়ে এল

রেলইয়ার্ডের পাশে বালি ও খেজুর,

স্বপ্নাতুর মেঘ, সহসা বিকেল...

 

সূর্যাস্তের আগে কোমল নি ধরেছে হরির বোন...

 

 

 

 

 

প্রত্যক্ষ

 

শাদা পৃষ্ঠা কখনো বিবর্ণ নয়, আমি জানি

এই বাগানের কথা, প্রসন্ন মালির মুখ

বাছুরের প্রতি খড়ের অভিনিবেশ

 

স্পর্শ বিঘ্নিত হয় না, এমনভাবে গাছের ফুলে

একটি সতেজ পোকা ঝুলে আছে...

হাওয়ায়— রৌদ্রের ফাঁকে তার নিয়তি লিখেছে জল

 

 

 

 

 আরণ্যক

 

ফুটেছে নতুন কুঁড়ি, লুডিকাস ফুল

রাত্রির অনেক আগে

ডালরুটি, বুনো কুকুরের ডাক

বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে গেছে ঝড়ে

 

নিভে আসে আলো...

বাগান ফেরত মালিদের ভাষা আর গান

 

অগত্যা বাড়ির কথা মনে পড়ে যায়

 

 

 

 

৭/ভ্যান গঘের প্রিয় রঙ

 

বুনো মোষ শিঙ বাগিয়ে আছে মাটির দিকে। নাক দিয়ে ফোঁস ফোঁস আওয়াজ। আকাশের মুখ দেখে আজ অমনই মনে হল। যেন জল ভেঙে খসে পড়বে মহাজাগতিক ভ্রূণ। সদ্যোজাত কান্নায় মেতে উঠবে গাছপালা, ফলবতী ক্ষেত, ঊষর প্রান্তর।

‘মত্ত দাদুরী ডাকে ডাহুকী ফাটি যাওত ছাতিয়া’... 

গ্রামের এক মাস্টার, সুধন্য, সাইকেল দাঁড় করায় পেয়ারাগাছের পাশে। পা টিপে উঠোন পেরিয়ে কলতলা যায়। মালতী উপুড় হয়ে বসে থালাবাসন মাজে— পিঠজোড়া ঘামের আলপনা। সুধন্যর আলতো স্পর্শে যেন বাজ পড়ে। ভয়ে কেঁপে ওঠে মানকচুবনে হাওয়া। রাগত সুধন্য দেখে মালতীর ঠোঁট। চুল ওড়ে জলভরা মেঘের ছায়ায়।

দূরে যাও... 'পুঁটুলি বাঁধিয়া রাখো নহুলি জৈবন'—

তোমার সবেধন নীলমণি, যাও গে, পুঁটুলির ভিতর ঢুকিয়ে রাখো!

বৃষ্টি এল ঐ...

 

 

 

 

১৩/ভ্যান গঘের প্রিয় রঙ

 

ঝিলের জলে সেগুনগাছের টলমল ছায়া— প্রত্নউপন্যাসের নায়িকা বিছিয়ে দিয়েছে চুল। ঐ ছায়া অতিক্রম করে উঠে এল একদল পাতিহাঁস— ভঙ্গিমা ও চলনে একেকটি স্কুটার। দফাদার বাড়ির গোয়ালে খড়ের গাদা থেকে সাপেধরা ইঁদুরের আর্তি কেঁপে কেঁপে আসে... এই দৃশ্য থেকে ছুটি নিয়ে ভিতরউঠোনে ঢুকি— অজস্র কালোয় ছেয়ে আছে এপ্রিলসন্ধ্যা। শানবাঁধানো মেঝে, তার উপর খেজুরপাতার মাদুর, পানের বরজ খানিক দূরে— লণ্ঠন-আলো, মেলে আছে স্মৃতি... ইতিহাস বইয়ের পাতা খুলে উঠে আসছেন সম্রাট অশোক ও হলধর গোপ     

 

 

 

 

 

১৭/ভ্যান গঘের প্রিয় রঙ

 

আমি কেবলই স্মৃতির কাছে ফিরে যাই। যখন হৃদয় ও মস্তিষ্ক ছিল তৃণের সমান, সেই অন্ধকার ও বুনোফুল ঘেরা পাথরের দিন আমাদের সন্ততি কেঁদে উঠেছিল। মৃত্যুর আগে আমরা দেখেছিলাম সুবিশাল পাষাণের মুখ— ঝর্ণার জলে তার শীতল চাহনি!

অথবা সেই ক্রিটেশিয়াস ডাইনোসর— বহুকোটি বছর পর আবার পৃথিবীতে— চিনতে পারে না আর কিছুই।

অধুনা সাড়ে পাঁচ ফুট তার দেহ রাগে ভেঙে ফেলে সম্মুখের কাচ... স্খলিত প্রাণ নগরীর ঘাসে ঘাসে ছড়ায়। প্রয়াসকাতর, সে মনে মনে স্মরণ করে বিদায়ের চুম্বন, দূরতম বাস্তবের সাঁকো— পুষ্পগুল্মময়...

মাধবী, তুমিও সম্যক জানো সেইসব দিন... সেই মীনগন্ধ ও আরাম, কেবলই রাত্রির প্রতি...

 

 

 

 

২০/ভ্যান গঘের প্রিয় রঙ 

 

আমি মীনরাশি— ঘাসের বাথানে এক ধূসর বটর আমাকে জানায় জল ও রৌদ্র অভ্যুত্থান গড়িয়ে পড়বে আগামীকাল— শলাকথা থেমে যাবে আমাদের— বিসম্বাদ জারি আছে বেতার হরফে

বর্ষার জলে ভেজে নুন— অনুষঙ্গ ছেড়ে বরং যুযুধান মেঘের কথা ভাবি— দুই পাথর, অন্তর্বর্তী তালবন— জাগো ঊষাকাল, চরাচর জুড়ে জাগো করবীর ঘুম— চায়ের নিমিত্ত জল, তুমিও উঠে বসো আগুনের কাছে

 

 

 

 

২৩/ভ্যান গঘের প্রিয় রঙ

 

অমরত্বের প্রশ্নে আমি সেই হাতচিঠির কথা ভাবি যা ধেয়ে এসেছিল বছর পঁচিশ আগে। আজ দারুণ অসুখ থেকে লিখে পাঠানো এক চিলতে কাগজ— তুমি কি ফিরে পাবে সেই প্রত্যুত্তর, গোলাপ বাগান? আমি কি পারব ঘুমহীন ফাঁকা মাথার ভিতর মেয়েটির নির্ভার মুখখানি ভাবতে?

বৃথা মনান্তর মুছে যাক। কেবলই বরফ পড়ুক। দু-একফোঁটা জল ফের গড়ে নিক প্রাণ। তুঁতে পাপগুলো ভেঙে চাঁদের আলোয় ভাসমান জনারের ক্ষেত... আবারও এক শৃগাল লাফিয়ে উঠুক ঐ স্বর্ণাভ হলুদ ছটার দিকে, আঙুরফল জ্ঞানে।

 

bottom of page