top of page

সহজ কবিতার মতো

তিতাস বন্দ্যোপাধ্যায়

​​

একটা সহজ কবিতা লিখবো ভেবে

আঙুলকে নির্দেশ দিয়েছি - 

'সোজা হয়ে দাঁড়াও!'

অক্ষরের শরীরে মাখিয়েছি আতর। 

বিষের সমুদ্র থেকে তুলে আনা কলম!

হে আমার কলমের মুখ,

এইবার স্পষ্ট চুম্বনে নিছক দূরত্ব মাপা যাক!

 

মাপা যাক সখের সম্ভ্রম,

যা তুমি তুলে রেখেছিলে ঘুণধরা পাঁজর বাক্সে,

খুলে দাও!

 

তালা নেই বলে

মদির হাততালি দিয়ে এতদিন যারা যারা

সহজ কবিতার দীর্ঘ জীবনের দিকে ছুঁড়েছিল শব্দভেদী বাণ

তারা সব জোনাকি কুড়িয়ে নিক!  

শরীরবাদ্য

সেলিম মণ্ডল

 

পাঁকভর্তি ডোবায় নেমেছ, শরীর কই?

 

মৃত কচুরিপানায় শ্বাসবদ্ধ যে ল্যাটাগুলো ছটফট করে

তারা সাঁতার ভুলে কোন আঁকার স্কুলে ভর্তি হয়েছে?

 

এখন কীভাবে উঠবে?

 

পিচ্ছিলতা জুড়ে একটা শ্মশান পুড়ছে

আর ছুঁড়ে ফেলা পটকাগুলো লাল কানকোর ওপর

বাজিয়েই চলেছে শরীরবাদ্য!

ভিড়

কুবলয় বসু

 

এক মগজ কথার মধ্যে দিয়ে আমরা ছুটে যাচ্ছি

যাবতীয় বেমানান ধরা দিচ্ছে, উল্কি আঁকছে অক্ষরে

পুজো আসার একটু আগের যে গন্ধ

তা ছড়িয়ে যাচ্ছে আসবাবে, মুহূর্তগুলোয়

আমাকে চিনতে না পারা সম্পর্কেরা

নিজেরাই পৌঁছে যাচ্ছে চুল্লির দিকে

আমি মুখাগ্নি করব বলে দাঁড়িয়ে আছি

যদি মায়া পড়ে যায়, এই ভয়ে আগুন সামলে রাখছি

ওপাশের ক্রসিং দিয়ে শেষবার চলে যাওয়া তুমি,

মোবাইল ফোনে আছড়ে পড়া তোমরা

একে একে মিছিল করে ঝাঁপ দিচ্ছ...

এত কথার মধ্যে নিজেকেও সরিয়ে না নিলে

প্রত্যেক পুজোর মরসুমে আমার না-রাখা কথাগুলো

একবারও গোস্তাকি মাফ করবে না

শিরোনামহীন – ১

শৌভ চট্টোপাধ্যায়

 

 

অন্ধরা কীভাবে কবিতা লেখেন, তা আমি জানি না।

অন্ধ মানুষের লেখা কবিতাও, সত্যি বলতে, আমি

পড়িনি কখনও। কিন্তু, একটি দৃশ্যহীন জগতের কল্পনায়

আমার শরীর হিম হয়ে আসে। সেই নিরেট, নির্বোধ, আর

জমাট-বাঁধা অন্ধকারকে, সরাসরি ভাষায় অনুবাদ করা

সত্যিই কি সম্ভব?

 

চারিদিকে, সমস্ত দৃশ্য আর বস্তুর গায়ে, অর্থহীন

শব্দের মতো একটা চাপা ও ধূসর রঙ। এমনকী,

চোখ বন্ধ করার পরেও তার আকার, তার বিন্দু-বিন্দু আলো,

কিংবা, অবাধ্য এক শরীরের স্মৃতি...আমরা জানি,

যেকোন সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে ভাগ করলে, হঠাৎ

আমাদের চোখের সামনে লাফিয়ে ওঠে একটা কাটা হাত—

আমাদের ভয় করে। ভয়ে, চোখ বন্ধ করে ফেলি।

 

তবে কি আমিও অন্ধ? অর্থাৎ যখন

সমস্ত দৃশ্য থেকে আমি মুছে ফেলছি আমার চোখ,

আর আমার চোখের মধ্যে, অনুষঙ্গহীন এই চেয়ে-থাকাটুকু!

bottom of page