রাস্তা চাই
তৈমুর খান
সময় খারাপ। সবাই অন্ধকারের দিকে
চলে যাচ্ছে একে একে
কাকে ডাকব? আমার ডাক কি কেউ শোনে?
ইচ্ছেগুলি লাফিয়ে নামছে রাস্তায়
রক্তে ভেসে যাচ্ছে প্রান্তর
মানবিকতার মৃত্যু শুধু
রাজনৈতিক শকুনেরা এসে খাচ্ছে লাশ
মৃত্যু দেখে দেখে রাস্তা খুঁজি
রাস্তা নেই
উড়ছে শুধু জীবনের বিবর্ণ উল্লাস
ধর্মভীরুর পাড়ায় ধর্মবিহীন দাঁড়ায়
অস্ত্রেশস্ত্রে গরম হচ্ছে হাওয়া
রাস্তা হারিয়ে ভুল রাস্তায় পাহারা দিচ্ছে অন্ধ দেবতারা
যাদের মাঝে বৃষ্টি নামে
সোমনাথ সাহা
"বারবার রাত্রি দিয়ে দিন যদি মুছি
হে পূষন ! কবে হবে শুচি ?"
প্রেমেন্দ্র মিত্র "পূষন"
কিছু কিছু বৃষ্টি দাগ রেখে যায় পাথরের মাঝে,
ঠিক যেমন ব্যস্ত নগরীর তলায় অভিমানী গ্রামখানি লুকিয়ে থাকে;
তেমন ভাবেই দাগ রেখে চলে যায় তাদের মাঝে যাদের মাঝে বৃষ্টি নামে।
যাদের স্থির চোখের পাতায় আকাশ নেমে আসে,
যারা মেহগনি বনের ভিতর কুয়াশা সরিয়ে অস্থির মগ্নতায় প্রেমের গভীরতা খোঁজে,
ঠিক তাদেরই মাঝে বৃষ্টি নেমে আসে।
যাদের বিকেলের তারে জমে থাকে শুকনো অভিমান।
যারা সকলের মনে মন রাখতে রাখতে নিজেদের হারিয়ে ফেলে,
হ্যাঁ তাদেরই তো মাঝে বৃষ্টি নামে।
বৃষ্টি নেমে ধুয়ে দেয় পাতাঝরা উপকথা, বসন্তের অভিমান।
যাদের জানলার পাশে ভাঁজ করে রাখা থাকে মেঘ।
যারা চিনতে শেখে কিছু মানুষ মানুষের বসত নিংড়ে সুখ পায়।
অবশেষে তাদের মাঝে বৃষ্টি নামে নীলবাষ্প হয়ে।
যারা জানে অভিমানের কোনখানে কতটুকু সুখ থাকে,
যারা শিশুর স্তন পান দেখে বুঝতে পারে গাছেদেরও তৃষ্ণা পায়।
তাদেরই মাঝে প্রেমের শেষে সন্ধ্যা নামার মতন বৃষ্টি নামে।
তবে কিছু কিছু বৃষ্টি তাদেরই মাঝে দাগ রাখে,
যারা প্রেমিকার পায়ের কাছে মোমের মতো জ্বালিয়ে রাখে নিজেকে।
এসো, পা ছড়িয়ে বসি
নিলয় নন্দী
এই ছুটে যাওয়ার কোন মানে নেই
এসো, পা ছড়িয়ে বসি, থিতু হই
বৃষ্টি ঝরে পড়ুক আমাদের উপর
অন্ধকার রঙের বৃষ্টি মোম ত্বক গড়িয়ে
ঊরুসন্ধি বা দিনান্তের খাদ গভীরে যাও
যেতে গিয়ে আমাদের নীরব চোখাচোখি
খিদের অপর নাম রণকৌশল
কী লুকোচ্ছি বা বিছিয়ে রাখছি নদীর উপর
নৌকা-রূপ ভ্রম ভাটিয়ালি কাম...
কাম শব্দ আপত্তিকর কিনা ভাবার আগেই
তুমি ছুটে যাও ফিসফাস চরিত্রহনন
এই ছুটে যাওয়ার কোন মানে নেই
বৃষ্টি হলে মধ্যবিত্ত রিকশা গাছতলা প্রেম
এই বেশ ভাল আছি
কবে যে সারল্য রঙের রোদ উড়ে এসে জুড়ে বসে
কামনা মানচিত্রে হু হু অভিমান পুড়ে যায়
অভিমানের অপর নাম সমর্পণ
নিঃসঙ্গ এক রাস্তা ইশারায় ডাকলে মুখ ফিরিয়ে
বসে থাকা দায়, তুমুল বৃষ্টি এলে মফস্বল ডায়েরি
বা অভিষিক্ত ছাতা উড়ে যায় গোপন শিকড়ে
ট্রেনের জানালা স্থির। নদী স্রোতহীন।
জং ধরে গেছে কবে ধরি শ্যাম না ছুঁই সাইকেলে
এসো, পা ছড়িয়ে বসি, থিতু হই।
নকশিকাঁথা
ইন্দ্রাণী পাল
তোমার দেহের নিচে শুয়ে থাকা
এই রাত্রিযাপন ...
অন্ধকার ঘনালে ছায়া সরে যায়
দূরে স্টিমারের ভোঁ
ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় কল্পলোক
একটি জীবন তবু প্রবাহ ভালবেসে
অনায়াস কেটে গেল
অনিবার্য গতিশীলতার দিকে
সেইখানে আমার নকশিকাঁথার নীচে
তোমার মরণ।