top of page

আলাদিন

ইন্দ্রাণী পাল

 

শুকনো ফুলের তোড়া আর সবুজ আপেল

সাজিয়ে রাখি টেবিলে।

কিছুই ফেলে দেওয়ার অভ্যেস নেই

ট্রেনের পুরনো টিকিট দলা-পাকানো কাগজ

ওষুধের বাতিল প্যাকেট ভাঁজ পড়া ডাকটিকিট সব।

 

মাঝেমধ্যে আত্মীয় আসে এখনও

সকাল-সন্ধে গল্প হয়; দুপুরে মাংস ভাত

টিভি খুলে মৃণাল সেন দেখি।

এছাড়া আর যা করতে পারি

চুপচাপ শুয়ে-বসে কাটিয়ে দিতে পারি

অবশিষ্ট জীবন।

 

বোতলের ভেতর থেকে তুলে আনি একটা দৈত্য

সারারাত পাশে বসিয়ে গল্প করি

আর ভোর হলেই তাকে লুকিয়ে ফেলি নিজেরই ভিতর

দুধের বাটি

তন্ময় ধর

 

১।

শাদা ঠোঁটের উল্টোদিকে আমরা স্বপ্নটা দেখতে থাকি

ভীষণ ঠাণ্ডা একটা কাপ থেকে দুধ উপচে পড়ছে

চিনির দানা থেকে যৌনতা তুলে নিচ্ছে মৃত্যু

আমাদের প্রত্যঙ্গে গহন ধুলোবালি

 

আমাদের সমস্ত ঘরবাড়িতে আমিষ ঢুকতে দিচ্ছি না

নাভি পর্যন্ত একটানা রক্তিম মাখন

চৌকাঠে বিষণ্ণ ঘুমের দুধ

 

ঘর পাল্টাতে পাল্টাতে শাদা একটা প্রেমে বিস্কুট ডুবিয়ে দিল কেউ

আর জামার নির্মমতা ভিজে গেল দুধে

 

২।

তোমার ব্যবসায় ততক্ষণে দুধে-আলতা শাড়ির বিজ্ঞাপন উড়ছে

দুধে জল মিশিয়ে দিয়েছে ক্ষুধার্ত পশুর চিৎকার

আলতা থেকে অমোঘ রক্তাল্পতা তুলে নিচ্ছে গভীর ঈশ্বরের দেবদাসী

এবং তার শরীরের পাথর

 

নষ্ট দুধের মুখ ততক্ষণে সরে গিয়েছে কানা-উঁচু একটা বাটিতে

রক্তচন্দন-মাখা সে বাটির টোল খাওয়ার শব্দ

ধাক্কা মারছে আমাদের রক্তের ফিসফাসে

 

সে শব্দতরঙ্গের স্থিতিস্থাপকতা বড্ড বেশী

 

 

উত্তরণ

সংহিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

 

মাঝ রাতে টানটান

রবাবের তার ছিঁড়ে যায়।

শিয়রে সাকিন মরা নদী।

ধুন জ্বালে, আটকে থাকে স্মৃতির বসত!

চাঁদনামে, বুকের ভিতর।

যতই নিজেকে লুকোও তুমি,

যাবে কোথায়? একটানে,

পাগলই জেল ভেসে যায়! বাধ সাধে,

খাগের কলম। মহাজাগতিক ছত্রে,

ভাষা নয়, বর্ণের বিলাপ!

শরীরের প্রতি বাঁকে, দুঃসাহসী ফুল!

কিশোরী কলাপ ময়ূরীর!

তুমি তাকে, ঝিল ভেবে,

সাঁতরে যেতে পারো কি কখনো?

অসাবধানের রাত, শুক্ল পক্ষের ছাঁচে গড়া মুখ,

পানপাতা বোধ! দেখো ঘিরেছে,

সময়! পৃথিবীর অসুখের দিনে ,

ছুঁয়ে যাও বেদনা বিস্তার!

তবেইতো স্নান হবে, মুক্তি হবে!

অমোঘ অনাদি উত্তরণে!

দেখা হবে তোমার-আমার!

 

 

বঁড়শি

গৌতম সাহা

 

পড়েছ কঠিন মনে। তাই এই হাল

এ বিপদ কাটবে না জানি

যতদূর মনে হয় স্বপ্নের সওয়ারি হতে চেয়ে

এ ঘন সর্বনাশ

দুর্বিপাক এসে এভাবেই জড়ো হয়

তুমি তার কিছুই জানো না

কুড়িয়ে আননি তাকে সে এসেছে

আর এসেই জানলা দরজা সব বন্ধ করে

একটি ছায়ার পাশে জুড়েছে অন্য ছায়াকে

মনকে বুঝিয়ে রাখো কী আর করা যাবে

 

 

রাত একটা কুড়ি                  

পূর্ণেন্দু মিশ্র

 

রাত একটা কুড়ি,

গাঢ় ঘুমের মধ্যে সাইরেন।

গাঢ় ঘুমের মধ্যে জিরাফের স্বর।

অন্ধকারের চোখ ঠেলে দেখি,

নিঝুম টেবিলের আলোয়---

মাথানিচু বসে,

সাহিত্য আকাদেমি পাওয়া এক কবি,

কি যেন লিখছেন।

সেইসব লেখা কাঁচভাঙা শব্দে---

উড়ে যাচ্ছে রাত্রি স্লেটে।

এবং ঝরে পড়ছে উল্কাপাতে।

যদিও আজ তার প্রমাণ বলতে---

ধুলো চড়ুইয়ের ধুলো খুনসুটি।

bottom of page