বিসর্জন
তাপস গুপ্ত
ক্রমশ ছোট হয়ে
আরও ছোট হয়ে ঘিরে ধরেছে সময়
পীঠস্থান শূন্য হবে বিসর্জনে
তবুও জানে, অর্জনে গৃহীত হবে দেবীপীঠ
এবং সম্মুখস্থ মুখ্য স্থানসহ
শিথিল কেন্দ্রাতিগ রেখা অবয়ব
তোমার চুলের ক্লিপ তুলে
গেঁথে নিই কণ্ঠনালী;
স্ফুরিত হাওয়া রুদ্ধতায় ঝাঁপ দেয়
যেসব মরু ঝড় পিঠে নক্ষত্র ঝরে গড়েছে মরুদ্যান
সেসব বিসর্জন মরীচিকা হয়ে
পুজো পায় শহীদ বেদী হত্যাস্থল।
ভুল
দীপ শেখর চক্রবর্তী
ভুল হতেই পারে
ভুল মানে তো সেই এক পুরোনো দিনের আয়না
যতই ধুলো হোক, মুছে নিলে
স্পষ্ট দেখা যায় মুখ।
মুছে নেয় কে?
চোখের জল!
মায়ের আঁচলও কি তেমন মুছে নিতে পারে?
তোমার পূর্বের ভুল মুছে দিতে পারে
মেহগনি কাঠের আরেকটি লঘুতর ভুল।
ব্রেইল ছুঁয়ে ছুঁয়ে
পূর্ণেন্দু মিশ্র
ব্রেইল ছুঁয়ে-ছুঁয়ে একটা ভাঙা কম্পাস খুঁজে পেল
তার পুরনো শহর।
ব্রেইল ছুঁয়ে ছুঁয়ে একটা যুদ্ধবিধস্ত ট্যাঙ্ক খুঁজে পেল
তার হারানো কবিতার বই।
ব্রেইল ছুঁয়ে ছুঁয়ে সদ্য বেগুনী ফুলের কুঁড়ি খুঁজে পেল
তার নিজস্ব বাগান।
ব্রেইল ছুঁয়ে ছুঁয়েই পুতুলেরা প্রাণ খুঁজে পেল,
ম্যানহোল থেকে উঠে এলো অন্ধকার অবতার।
ব্রেইল ছুঁয়েই জানা গেল কয়েদী রোদ ভাঙলেই
খোঁজ মেলে সোনার বোতাম।
ব্রেইল ছুঁয়েই শেখা হলো পাউরুটিওয়ালারাই মূল ধর্মগ্রন্থ।
ব্রেইলের মতো রাতের নক্ষত্র ছুঁয়ে ছুঁয়েই
খুঁজে পাওয়া গেল ভোরের চাবি।
তস্কর
শোভন মণ্ডল
ওই তো সেই আগুন-শিখা
স্নিগ্ধ আবেশ আর অনন্ত আজুবা, এই তো জ্বেলে রাখা
কবেকার প্রদীপের শেষ রশ্মিপাত।
জানি, এভাবে ধরে আছো আজও নিভৃত গোপন---
শুধু ওই মেলে রাখা সোনার ঝাড়বাতি
মেনেও, রয়ে যাক অগোচরে, চোখের আড়ালে
সেইসব অবাক-অলংকাররাজি;
আজ তবে থাক, থেকে যাক এভাবেই
খুলোনা খুলোনা, ওই ঐশ্বর্য-দ্বার---
পুরনো তস্কর আমি,
নিজেকে সামলাতে পারবোনা আর...
অনাম্নী
পরাগ মিত্র
এন.জে.পি'তে ভোর হলে মালবী অনুরাগ কামরায় বার্থ থেকে বার্থে ঠিকরে পড়ে---
"ও বাবুল প্যায়ারে..."
মাধুকরী তালু যত গঞ্জনা খুঁটে নেয়
খুচরো তত না।
জেগে থাকে শুধু চেয়ে থাকা আর্তি। আর্তিই উনুনের সমিধ। কাপলিংয়ের টাল ঠেলে আর্তির সাম্পান ঠেকে শেষ কামরায়।
নদীপথ, ঝোপজল, সানুতটী ছায়াপথ ছুঁয়ে
হুইসেলের রেওয়াজে তখন মেঘরঙ পয়ারে অন্বয়
এলোচুল কিশোরী একমনা গান শেষে খুচরো ঝাঁকিয়ে ফেরে...
সর্বশিক্ষা মিশন ট্রেনের কামরায় চোখ রাখে না---