মাপকাঠি
প্রাণজি বসাক
যেতে যেতে ভাবি যাবার নিগূঢ় অভিপ্রায়। দিশানির্দেশ নামাবলী গায়ে চড়িয়ে আগামী পদক্ষেপ। মাথার উপর ভারি নীল আকাশে দেখি একেকটা নির্মম ঘাই। উড়ুক্কু পাখিদের ডেকে বলি, ভাই সাবধানে থেকো সবাই। হাওয়াবাতাসকে সঙ্গে রেখো, আবহাওয়া উপযুক্ত না হলে উড়ানে বিশ্বাস নাই।
আমাদের পায়ে পায়ে ছায়া চলে, কথা হয়, জিরোবার সময় রুটিনে খানিকটা পরিবর্তন ঘটে এবং সেইহেতু বন্ধুবাৎসল্য। বন্ধুরা আজ অনিবার্য কারনবশতঃ শহরের ফ্ল্যাটে গেছে আবছায়া ভবিষ্যৎ মোহে। ফিরে আসবে যখন, তখন আর পাখির ডানায় রোদ থাকবে না এটা নিশ্চিত।
যেতে যেতে ভাবি অসীম অনন্ত কাকে বলবো। চোখের দৃষ্টি যতদূর যায় সে তো সীমারেখার বাইরে নয়। আর মনশ্চক্ষু যা দেখে তাও অসীম নয়, তা যে নিকটেই ঘোরে ফেরে।
আর এত কাছাকাছি পাশাপাশি থেকেও মনে হয় অনন্ত কোন দূরে তুমি।
বলে রাখা কথা
সোমরাজ ব্যানার্জী
একটা দুটো নয়। অনেকগুলো কথা বলতে হবে। বা বলার চেষ্টা করতে থাকতে হবে। বলতে পারা যাবে কিনা জানি না। সে তো অনেক কিছুই জানা যায় না। বোঝা যায় না। কখন কীভাবে মৃত্যু আসে, আকাশ থেকে তারা খসে পড়ে, সকালবেলার গান থেমে যায়, এইসব। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে এসেছি কিছুদিন হল। আসার সময় তাড়াহুড়োতে ছোটবেলার আলব্যামটা কোথায় ফেলে এলাম মনে নেই। তোমাকে বলেছি বোধহয়, না? আবার মনে পড়ছে তাই বললাম। সেই দুপুরের জামরুল বন, দুটো সাইকেল, কয়েকটা ভাঙা কথা, নদীর জলে ভেসে আসা পশুর লাশ, শরীরে জড়িয়ে থাকা আগাছা, আরও কত কি। একটু একটু করতে ভুলতে হবে সব। সময় লাগবে।
জাতিস্মর নদী
মধুসূদন দরিপা
আমি একটি নদীতে ডুবে জাতিস্মর হয়েছি
গোটা পৃথিবীর মানুষ আজ
জেনে গেছে যে
আমি আদতে কোন হেঁজিপেঁজি
মানুষ নই
বরং রীতিমত একজন হোমড়া চোমড়া কেউকেটা
রাতারাতি খাতির বেড়ে গেছে আমার
মেঠো বাড়ির স্টেটাস ম্যাজিকের মতো
চকচকে গ্রানাইটের আকাশ ছুঁয়েছে
ভিভিআইপি শিডিউলের চাপে
আমার ঘুমের নাভিশ্বাস উঠেছে
মাস মিলিয়ন ভিড়ের অন্ধকারে
আমি সেই নদীটি খুঁজে মরছি
যে নদীতে ফের ডুব দিয়ে আমি
আমার জাতিস্মর জামাটি ফিরিয়ে দিতে পারি
নক্ষত্র
সৌরভ বর্ধন
বিদ্যুৎহীন রাতে আমি শুকতারার জন্য
হলদেটে গরদের মেঘ
জ্বেলেছি ঘোরের কোণে
জালার মধ্যে রেখেছি মূকপাখি -----
সে বাণিজ্য জানে না, শব্দও জানে না
সার্থকভাবে এই সুযোগ নিয়ে
নির্বিকার নাড়ীটির ভিতর প্রতিরাতে
একটু একটু করে নক্ষত্র স্থাপন করেছি
আর সেই চিক্কণ স্তম্ভের আলো পড়েছে সারাগাঁয়ে
জোনাকি
সুবর্ণকান্তি উত্থাসনী
বিষাদ ছিঁড়ে অগ্রসর হই
তবুও কবন্ধ ভালোবাসে
পেঁচা
চন্দ্রিমা
সন্তপা নারী
বাসর রাতে
রতিভ্রষ্ট পথিকের বিউগলে
বাতাস আর নক্ষত্রের
তামস শহরে সবুজের শিহরণ ঘটে
তুমি রোশনি বড়ো ভালোবাসতে
তোমার ধ্যানের ভেতর
যেখানে প্রস্ফুটিত দ্বিদল পদ্ম
আমি জোনাকি হয়ে জ্বলি