এই মাসের কবি : দোলনচাঁপা চক্রবর্তী
আলাপ পর্ব
পরিচিতি: দোলনচাঁপা চক্রবর্তী খুব সামান্য লেখালেখি এবং অনুবাদ করেন। প্রচুর গাছপালা এবং অনেকগুলি কুকুর আর পাখি নিয়ে দিনচর্যা। দুটি কবিতার বই- "ঈভ, একটি ডালিমখেতের বিজ্ঞাপন" ও "অস্থিচ্যুত গ্রন্থিচ্যুত" এবং একটি অনুবাদ কবিতার বই- "দূরের স্বদেশ", আঘা শাহীদ আলির "দ্য কান্ট্রি উইদাউট আ পোস্ট অফিস " কাব্যগ্রন্থের অনুসৃজন।
কবিতা
কাবিনী সঙ্গমে
(১)
সূর্যাস্ত—
আমার পড়ার ঘরের কোণাকুনি
নতুন একটা মদের দোকান
ওভারব্রিজ—
বাস গেলে নড়ে ওঠে মন্দির,
মিনিবাসে হাওয়া দেয় খুব
প্রতি বছর—
অলিতে গলিতে শ্যামাপোকা
শুটিঙে বিরতি—
চা-অলাকে বাঁয়ে রেখে ট্রাম যায়
পার্ক স্ট্রীট গির্জা—
ফ্রেস্কোতে ধূসর হচ্ছে, কাটা পড়ছে প্রাচীন সময়
(২)
সন্তান একটা পাহাড়ি পথ
তুমি হাঁটো। আমিও
পাশাপাশি হাঁটি
মাঝখানে জুম চাষ হয়
(৩)
বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা আসছিল
দূর থেকে
দোকানপাট দ্রুত বন্ধ হয়ে গেল
রাস্তা ফাঁকা, পুলিশ নামল দুপাশে
রাজার সুসজ্জিত হাতি
রাজবাড়ির আদরের পশু, আমাদেরও
রেশমের কাপড়ে লেখা
রাজার চিঠির উল্টোদিকে
হাতে তৈরি রঙে আঁকা ছবি
চন্দন কাঠের সিংহাসন
ইতিহাস মূলত রক্তের ভেতর
সামান্য সুগন্ধ রেখে যায়
(৪)
সূর্যমন্দির
দেয়ালে আলতো হাতের ছাপ
আমাদের
পুরনো বয়সকে
হারিয়ে যেতে
দিচ্ছে না
(৫)
কফি খেত, মরিচের গাছ
পাহাড়ে ছড়ানো অন্ধকার
বাংলোর গেটে
বোগেনভিলিয়া
বন্ধ সিনেমাহল
ভাঙা রেলইয়ার্ড
পোস্টারে মধুবালা
কয়েক দশক
এভাবেই পেরিয়ে এলেন
(৬)
ডুবজলে ভরে উঠছে
কাবিনী নদীর খাঁড়ি
বাবার মৃত্যুর দশ বছরে
আমার মায়ের ছায়া
আরো দীর্ঘতর হল
(৭)
লন্ঠন জ্বেলে খুঁজছি
থোকা টগরের গাছ
মায়ের জানলার নিচে
মায়ের লাগানো লেবু গাছ
সুগন্ধী পাতার ধমনী ও শিরা
লন্ঠনের আলো কমে এল
মা অন্ধকার ছাদে পা গুণে হাঁটে
বাবা বলল, জ্যোৎস্না রাতের রিহার্স্যাল
মহীশুর, ২৩শে এপ্রিল, ২০২২
(৮)
মাষকলাইয়ের গন্ধ
গয়না বড়ি
আঙুলের ছাপ জলের বাটিতে
ডুবসাঁতার
পানকৌড়ির ডাক
বউবেলা
জং ধরা তোরঙ্গ
পিঁজে যাওয়া বেনারসী
(৯)
তোমার সত্যি কথার ভেতর
আমার একটা সত্যি কথা থাকে
তার ভেতরে তোমার সত্যি
পোড়া ভাত,
বুড়ো ধুঁধুল,
ছানা কেটে যাওয়ার গন্ধ নিয়ে
আস্ত দেশই ছিটমহল
২৫শে এপ্রিল, ২০২২। মহীশুর।
(১০)
অষ্টমীতে কৃষ্ণ
নামবে লালবাঁধে
ডুবসাঁতার দেবে
কচি কলাপাতা
শাড়ি নেবে
লাল ডুরে
চৌমাথা থেকে
বড় মাটির সরা,
পঞ্চদীপ, ঘি, শীষওঠা ডাব
সিঁদুর, ধানদুব্বো
অথবা ঝিনুকের খোলে
সামান্য দুধ
মদনমোহন জীউ
ঘন্টাধ্বনি শোনেন
আঁতুড়ঘর থেকে