top of page

এই মাসের কবি : দীপ শেখর চক্রবর্তী

আলাপ পর্ব

20220211_125323.jpg

দীপ শেখর চক্রবর্তীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা বারাসাতে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। কলেজ জীবন থেকে কবিতা লেখা। লিখেছেন প্রায় সব বাণিজ্যিক পত্রিকা এবং লিটিল ম্যাগাজিনে। কবিতা ছাড়াও গদ্য লেখেন তিনি, ছবি আঁকেন। প্রিয় রঙ তার গাঢ় নীল। প্রিয় শখ, হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া।

কবিতা

স্তব্ধতা

একটি রেলগাড়ি ও তার শব্দ

শীতকালে যেভাবে নিজেদের ছেড়ে চলে যায় বহুদূর

সে বোধেই আমি

আমি ও আমার নীরবতাকে দেখি।

এই এক দৃশ্য

যেন দুপুরের বারান্দায় বসে আছে এক শিশু।

দুপুর কথা বলে তার সাথে

সে ভাষা আমাদের কখনও হবে না।

আমাদের জন্য

রোদে মেলা রঙিন কাপড়টি

আকাশ ও দুচোখের স্তব্ধতা ধরে রাখে।

 

বিচ্ছেদ

 

দুটি ট্রেন দুদিকে চলে যায়

মাঝখানে পড়ে থাকে

একটি নির্মম স্টেশন।

 

দুয়েকটি সিমেন্টের বেঞ্চ

একজন লোক যে কখনও টিকিট কাটে না।

 

কমলালেবু শেষ বেলায় আট-টা কুড়ি টাকায়

মানুষের খুশি

কত সহজ হয়ে যায় সহজে।

 

মানুষের দু:খ

যেকোনও স্টেশনে হঠাৎ নেমে যেতে পারে

একটি বেকার যুবকের মতো

যার চুল এতক্ষণ উড়ছিল ট্রেনের দরজায়।

 

 

পিতা

 

বন্ধুর বাবার মৃত্যুসংবাদ

আমাকে দূরে রাখে

আগুন এবং মুখ দেখা থেকে।

 

তীব্র শীতের ভেতরেও আমি

বাবার সাইকেল ঝেড়েমুছে

বহুদূর যাই…

 

এই বনপথ যেন অক্লান্ত নীরবতা

তবুও

অহেতুক আমি বিবর্ণ ঘন্টিটি বাজিয়ে চলেছি ।

 

পোশাক

আমার ঘরে একটিও নারীর পোশাক নেই।

যা আছে সমস্তই বাবার শোওয়ার ঘরে

কয়েকটা শাড়ি, অন্তর্বাস, বহু ব্যবহৃত সায়া

 

আমার ঘরের আলনায়

একজন নারীর পোশাক

ঝুলে থাকবে

এই দৃশ্যের দিকে আমি

ধীরে

       ধীরে

এগিয়ে যাচ্ছি।

 

ধীরে ধীরে

কারণ আমার পা টেনে রাখছে

অনন্ত দ্বিধা, অপরাধবোধ।

 

 

আত্মা

এক আশ্চর্য উন্মাদনা

বাতাসের মতো বইছে।

আমরা সকলে ইচ্ছে করে এড়িয়ে যাচ্ছি তাকে।

 

তুমি কি জানো?

কেউ-ই জ্বলন্ত আত্মাকে দুচোখে দেখতে শেখেনি।

 

মাংস নয়

     বাজার নয়

ক্রেতাসুরক্ষা আদালত নয়

 

মানুষের আত্মা আসলে

একটি শাদা বেড়ালের লোম

যা উড়ে চলেছে

যার হাতে ধরা মস্ত বড়

শূন্য এক খাতা।

 

অ্যাকোরিয়াম

অ্যাকোরিয়ামের ভেতর

কোনও মাছ মরে ভেসে উঠলে

তার শ্রাদ্ধ শান্তি করা উচিৎ

হাত দিয়ে দেহের ওপরে

কিছু কৃত্রিম ঢেউ দিলে ভাল হয়

নইলে তার আত্মা মুক্তি পায় না

অ্যাকোরিয়ামের হলুদ আলোটি

          জ্বলে আর নেভে

           নেভে আর জ্বলে

তুমি ভয় পাও, কারণ

তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে অবিশ্বাস

তোমার শরীর জুড়ে আছে

এক আশ্চর্য শিকড়হীনতা।

 

কবি

আমাকে কেবল আমিই মুছে দিতে পারি

আমাকে মুছে দেওয়ার পর

যেটুকু রবারের ধুলো

শিশুরা

সেসব থেকে বানাবে

ফুল, লতা-পাতা।

 

আর একটি বিশেষ শিশু

কিছুই বানাবে না

তার মুখের ভেতর

জোর করে সে আটকে রেখেছে

 

দীর্ঘ, খুব দীর্ঘ এক ফুঁ।

 

দস্তানা

দস্তানা পরার পরও

হাতটা, হাতই থাকে

বড়জোর আগের থেকে

          একটু গরম।

 

দস্তানার উপযোগিতার মধ্যে

                    যদিও

হাতকে আড়াল করাও পড়ে।

শীতকাল বড়জোর আড়াই মাস

বাকি সাড়ে ন’মাস

দস্তানার একাকীত্বের কথা জানে

    ছোট হয়ে যাওয়া সোয়েটার।

 

 

শূন্যস্থান

আঙুলের মাঝে এই ফাঁকগুলো

আমাকে অনেককিছু শেখায়।

আরও বেশি চুপ করে যেতে বলে।

 

যন্ত্রণার থেকেও কী যন্ত্রণাময়।

মৃত্যুর থেকেও বেশি মৃত্যু

এই একা হয়ে যাওয়া

 

তবু একেকদিন এও সুন্দর !

রোদের ভেতর এক ঘুমন্ত বেড়ালের থাবার মতো

যেমন উঠোনে নামিয়ে আনা শবদেহ

দিনের আলোয় মনে হতে পারে

      বাগানের কোনও সদ্য ফুটে ওঠা ফুল।

 

 

 

দুঃখ

সেই দুপুরকে ভালবাসি আমি

যা, মায়ের ভেজা শাড়িটিকে

শুকিয়ে দিয়েছে।

 

গোটা পৃথিবীটাই

একটি রোদের শাড়ি

যা খুলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।

 

শাড়ির ভেতর সুতোর ফাঁকগুলো

এত ছোট যে দেখা যায় না।

 

একটি শাড়ি-ই তাই মস্ত আনন্দ

দুপুর উপহার পেয়েছে যা

উঠোন উপহার পেয়েছে ঝুঁকে থাকা স্তন

অনন্ত সহ্যক্ষমতা।  

 

স  ম্পা  দ  ক  ম  ণ্ড  লী

তৃণা চক্রবর্তী

সুরজিৎ পোদ্দার

সুন্দরম দাস

bottom of page