top of page

এই মাসের কবি : দয়াময় মাহান্তী

IMG-20210130-WA0008.jpg

আলাপ পর্ব

দয়াময় মাহান্তীর জন্ম ১৯৮৫ সালের ২৭শে মার্চ। কাশিডী পুরুলিয়ার চেপুয়াতে তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বর্তমানে চাষবাস ও গৃহশিক্ষকতা তাঁর পেশা। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : নৈরামণি বালি(২০১৪), পিরামিডের পিঙ্কিকে(২০১৫), সিকোইয়া(২০১৯), লোথালের জ্যোৎস্না(২০১৯) ও যখন তোমার পতন লেখা হচ্ছিল(২০২০)। প্রকাশিত গদ্যগ্রন্থ : আমাদের টিউশনি (২০১৫) ও যে আনন্দ কবিতা হয়ে আসে। দয়াময়ের সাথে যোগাযোগ করতে হলে মেল করুন dayamay1986@gmail.com এই ঠিকানায়।

 

কবিতা

এসো আজকের সন্ধ্যায়


সন্ধ্যা হওয়ার ঠিক আগে ছিপ উঠে গেলে
আসল খেলা শুরু হয় জলে
কে তুমি নেমে এসেছ,হাঁটুর উপরে পরিধান
তুলে ? সরে এসো,সে বড় ব্রীড়িত
তাকে নামতে দাও,বৃক্ষের উপর থেকে
আদিদেবের শীর্ষ থেকে--


এতক্ষণ ধরে ভাসিয়ে দিলে সুরে
বিনিময়ে কোন সুরায় বাঁধি হৃদয় ?
সরে আসি দূরে
অন্ধকারে ঋণ শোধ করি
একাকী বৃক্ষের নীচে
ঝরে পড়ি চুপচাপ
কোথাও কিছু ছাপ যাই না রেখে
যেতে চাই না--


তুমি সাদাতর হলে আমার লেখার
দিন ভেসে যায়...
সমস্ত রচনার মানুষ অন্ধকারে
সুখে থাকে,এই তার অসুখ
তুমি তাকে সুস্থতা দাও,বিশ্রাম দাও
এসো আজকের সন্ধ্যায়,মহাপৃথিবীর
রমণীয় অন্বয় হতে,খচিত নক্ষত্রের
নীচে স্পর্শ করো এই জল--


ডুব দেওয়ার মুহূর্তে জলে যে শব্দ উঠে
তাকে তুলে রাখি
গভীরের বোধে তার উচ্ছ্বাস বা আর্তনাদ
চিত্রিত হয়,যে যায় সে যাক
যে যেতে চায় না,তবুও যাকে যেতে হয়
তার কথাই কহতব্য সৃজনে
ইতিহাস মৃতের সমাধি ছাড়া কিছু নয় ;
সেখানে জুতো খুলে প্রবেশ করো,
ধূপ দাও,জ্যোৎস্না পড়ুক
কোন শুভ,অশুভ বলো না
মৃতদের ভালোবাসো,ক্ষমা করো।

 

 

 


ঈর্ষা

চন্দ্রের চাবুকে ঘুমের অন্ধকারে
স্বপ্নের মোম চলাফেরা করেছে
কাল সারারাত ...

জাগরণ কি হালকা, বায়বীয়
ভাবি, তারপর গৃহসজ্জা, আসবাব
প্রয়োজনহীন।

উড়ে যাব কোথায়?
যে শ্বেত সন্ত্রাসে আঁধার মুছে
যায়, অকস্মাৎ.;

স্মৃতি বরফের আগুনের মতো,
ছোবল মারে শীতল শিখায়,
গোপন রক্ষিত দ্বারে ।

সাদা সবকিছু সাদা,
নিশীথে জ্বলে ওঠে শুভ্র গাত্রবর্ণ,
আমার হাত ধরে।

পৃথিবী ঘুমায়, জল বহে কলকল
আমি সেই থেকে জেগে থাকি,
স্বপ্নাহত...

দূরে কে যেন শান্তিতে,
কার চুলে চুমু খেয়ে
ক্লান্ত, নিদ্রার আগে।

আমি কি তাকে ঈর্ষা করব না?



 


প্রতিপালন

সুবিধাবাদীর বিপরীতে সুবিধাবাদী,
অসুবিধা ঘোষিত মঞ্চ থেকে মাইকে, জনশ্রুতিতে ...

সমস্ত ট্র্যাফিক জ্যামের শেষে
তোমার সান্নিধ্যই অভিপ্রায়,
তবু তার জামায় বিভিন্ন মোড়ের রঙ,
সঙ্ তার জোকারের মতোন।

কী তোমার প্রতিবেদন?
নিউ নর্মাল মোডে পানপাতা
ত্রিভুজ ধর্মের নিপুণতায়, পরিবর্তনে ...

ক্রিয়াপদটি অতিরিক্ত,অলস মানুষের কাব্যে,
নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধিপদটি বৃহৎ ...

প্রতিক্রিয়া ঈর্ষামূলে ।

রসাতলের প্রতিপালনে চরাচর
বাদময়... বাদই আবাদ

বাদাবনের ফাঁদে চাঁদের মায়া
বিল্লীর শরীরে বাঘের ছায়া

চমৎকার হুয়া হুক্কা চতুর জ্যোৎস্নায় ...


 



শপথ

বাংলা ভাষায় কোথাও গান বেজে উঠলে
আমার বুকের ভেতর শীতকাল
প্রথম দেখার রোদ কুয়াশার পথে
এসে পড়ে সিক্ত পাতায় --
অবিনাশী বিন্যাসে
                      ন
                      দী
                      র
                      জ
                      ন্ম
                       হ
                       য়
এই নদীকে স্পর্শ করে, আমরা শপথ করেছিলাম
বাংলা ভাষায় কোথাও গান বেজে উঠলে
দু-দিকে দুটি চলে যাওয়া পথের
                 মাঝখানে
একটি শীতকাল এসে মনে করিয়ে দেয়
সে শপথ আমরা রাখতে পারি নি।

 
 

 

 


সংবোধি

টুনটুনির সঙ্গে অনেক তো
লড়ে গেলে--

ফুলের দিকে তাকাও নি
কতদিন হল?

তাকাও।
কীভাবে ফুল থেকে শিশির পড়ে,
রোদ লাগে পুষ্পের শরীরে।

বহুদিন থেকে কবিতা লেখার
চেষ্টায় মেতে আছো,
মাথা কুটছো একটি শব্দের জন্য ...

একটা কবিতা, তুমি যার জন্য
নিয়তি নির্দিষ্ট ছিলে, এতটাই
সহজে তোমার কাছে
ধরা দিতে চাওয়া কবিতাটিকে
না-লিখেই উড়িয়ে দাও ...

মানুষ যখন চিতায় উঠে
ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়,
আগুনে, জলে, মাটিতে,বাতাসে...
কিন্তু এই অনির্বচনীয় দৃশ্য সে নিজে
উপভোগ করতে পারে না

তুমি পারবে, যখন তোমার
অরচিত কবিতাটি এই পঞ্চভূতে
একটু একটু করে হারিয়ে যাবে,
তাকিয়ে থাকো--
তোমার চোখই তখন আগুন,
মন চিতা,
কবিতাটি আসলে নিজে তুমি।

টুনটুনির সঙ্গে
অনেক তো লড়লে,
এবার ফুল ফোটার দিকে
তাকাও।

 

 

 

 


অধ্যায়

কৃষকের কাছে শেখো।

কুচুটে কবি,
টুকরো টুকরো হয়ে
যেতে অভ্যস্ত সামান্য স্বার্থে
নাগরিক বুদ্ধি,

কৃষকের কাছে শেখো।

সংঘবদ্ধতা,
সংগ্রাম।

বীর্যহীন পুরুষ তুমিও
জেনে নাও কর্ষণপদ্ধতি,
উর্বরতার অধ্যায়ে
এখনও পূর্বপাঠের অনুশীলনী
তোমার আয়ত্ত হয় নি।

গণতন্ত্র শেখো,
হারামের বিরুদ্ধে ঘাম
কীভাবে ভয়ঙ্করী নদী হয়ে উঠে
বিদ্রোহে, বিপ্লবে ...

 

 

 

 


ঘাম

ঘাম ঝরাও...

তোমরা ঘাম ঝরাও না
বলেই শরীরের ভেতরে এত ঈর্ষা
পক্ষপাত,কুটিল তত্ত্ব জমে উঠেছে--

এ সব তত্ত্ব দিয়ে কী হবে?

কৃষক তোমাদের বিপ্লবে আর
অংশ নেবে না
শ্রমিক তোমাদের সংগ্রামে
শরিক হবে না

কেন হবে?

মাঠের মানুষ একমনে
কোদাল চালায়
মাটিকে আদর করে
তাদের স্বেদ চুইয়ে চুইয়ে
ক্ষেত সরল হয়
এই সারল্য দিয়েই বৃক্ষের
জটিলতার নির্মাণ--

তোমরা তাকে না-বুঝেই
তর্ক করো,বই লিখো

কিন্তু তোমাদের কলমে ঘাম কই?

যে অক্ষরে ঘাম নেই
তারা মাটির সারল্য
কিংবা বৃক্ষের জটিলতা
কারোরই রহস্য ভেদ করতে পারে না

আগে ঘাম ঝরাও।

bottom of page