এই মাসের কবি: সুন্দরম দাস
আলাপ-পর্ব
কবিদের ভুবনে আমি বহিরাগত। আমি পরম্পরায় বিশ্বাস করিনা। কবিতার যেকোনো থিয়োরির প্রতি আমার তীব্র অনিহা। সাইকেল চালানো শেখার মজা যেমন পতনে, সাঁতারে নাকে-মুখে জলের অনুপ্রবেশ, কবিতায় নিজস্ব সড়ক বুনে নিতে তেমন-ই আত্ম-খনন, পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ । লেখালিখি বছর পনেরর কাছাকাছি হলেও প্রকাশ যৎসামান্য। নাটমন্দির, কবিতা পাক্ষিক, যাপনচিত্র, কৃত্তিবাস, শব্দযান, আত্মদ্রোহ, পদক্ষেপ, যুগসাগ্নিক, ভাষাপথ, দিগন্ত, তবুও প্রয়াস, সারাক্ষণ, পথের আলাপ, শব্দের মিছিল, স্বপ্ন উড়ান ইত্যাদি লিট্যল ম্যাগাজিনে কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। কিছু কবিতা ‘সৈরন্ধ্রী’ ছদ্মনামে প্রকাশিত। প্রকাশের থেকে লেখালিখিতে আরো তন্ময় হওয়াই আমার লক্ষ্য। ২০১৮ কলিকাতা বইমেলায় প্রথম কবিতার বই--- “নতুন অক্ষর, স্বয়ং-জাত”, যাপনচিত্র প্রকাশনা থেকে।
১৯৮৯, ২১ শে ডিসেম্বর জন্ম। বাবার ট্রান্সফারের চাকরি। ছোটবেলা ছিল পরিযায়ী । উচমাধ্যমিকের পর কলকাতায় বসবাস। পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর, সেন্ট জেভিয়ার্স ও বসু বিজ্ঞান মন্দির থেকে। প্রাচীন ভারত সম্পর্কিত গবেষণা গ্রন্থগুলি এবং বাউল-ফকির-দরবেশ প্রভৃতি লোকায়ত সম্প্রদায়গুলির অবতল সমাজ ও জীবনগাথা আগ্রহ সহকারে পড়তে চেষ্টা করি, যদিও অল্প-ই পড়া। চলচ্চিত্র দেখতে ও ছবি তুলতে ভালোবাসি।
কবিতা
প্রকৃত সারসের খোঁজে
ক্রমে শিকারি হয়ে উঠছি।
তুমি এই ফাঁকে শিখে নিচ্ছ, ফাঁদে না পড়ার জাল।
আর পৃথিবী ঘুরেই চলেছে আকর্ষণে
নীলতিমি খেলার গোপন নির্দেশ পৌঁছেছে ইতিমধ্যে।
ভুল করার লোভ সামলাতে না সামলাতে,
আবার এই পতন।
ডানা খোলেনি সঠিক সময়ে
আসছে আরবী উড়োচিঠি, সারহা।
বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের মাথায় ডেডফল ট্র্যাপ;
আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ হয়?
প্রার্থিত লাইক পেয়েছ যথাসময়ে।
এই জল সবুজ ও পাতা নীলের ভুবন ডিঙিয়ে,
কথা বলার জন্য খুঁজছি
একজন রক্ত-মাংসের মানুষ...
‘শুধু স্রোতে ভাসা’
আমার পৈতৃক ভিটে জাহাজ গড়ন
বাড়ি তো স্থবির। গাছ-সম।
কোত্থাও যাওয়ার নেই
প্রজন্মের যাওয়া আসা দেখে নির্বাক;
জন্ম দেখে। মৃত্যু দেখে। ভালোবাসা, বিরহ।
ওয়েদার-কোট গায়ে চাপিয়ে বার্ধক্য ঢাকে
অথচ ঘর বুঝি ভেসে যেতে চায়...
ভেন্টিলেটর থেকে উড়ে উড়ে যায় যুগল পায়রা;
আমাদের জাহাজ-ঘর চলে সাগরসঙ্গমে
বাড়ি ছেড়ে, ভিটে ছেড়ে, ঘর ছেড়ে, আমরা
যে যার মতো ভেসে পড়েছি, ফ্ল্যাট সংসারে...
হোয়াট’স অ্যাপ
হাসো, তুমি হাসো।
এই অবহেলা তোমাকে মানায়
রাত একটা চুয়াল্লিশ।
তোমাকে কেন্দ্র করে চ্যাট-বৃত্ত।
হাসিতে, স্মাইলিতে, জিফে, স্টিকারে
উপচিয়ে উঠছে। স্তুতি ও বন্দনায়।
ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছে স্তাবক।
তোমার সাথে সেলফি তোলার আবদার।
পাউট করো হে হংস-চঞ্চু! সূচালো চিবুক।
সময় কেবল সংখ্যা মাত্র। রাত থেমে আছে।
আমি তোমার ভিতরের লোক।
অন্তত, নিজে তাই মনে করি। ভেবে
নিশ্চিন্ত হই। অনুলোম বিলোম নিঃশ্বাস
নে’ই বিভোর হয়ে। আমি নিরামিষাশী।
তোমাদের নন-ভেজ জোকের আসর,
হৈ হুল্লোড়, রাতপার্টি, ডিজেনাচ, টাকিলা
পিওনের রকমসকম; তোমার ভিতরে চুপে
বসে অনুভব করি, একাত্ম হওয়া বলে কাকে!
ছুটি
রান্নাবান্না, হাঁড়িকুঁড়ি থেকে পালাতে চাইছে।
গরম কড়ায় আচমকা জলের চিড়বিড় থেকে,
ফুটন্ত তেলে কাঁচা-লঙ্কার ছটফটানি থেকে মুক্তি
চাইছে ভিতরবাড়ির লোকটা। রান্নাঘরের গন্ধ থেকে।
কোথায় যাবে? পালাবে কোথায়? এই গোল দুনিয়ায়
দেখা হয়ে যাবে যেকোনো রাস্তায়; হঠাৎ করে আচম্বিতে!
নিজের মধ্যে অপর হয়ে আর কতদিন? তিরিশ বছর
খুব কম নয়; খুব বেশি কি একটা জীবন ফুরিয়ে যাওয়ার?
তারপরে আর বলার কিছু থাকে না। যাওয়ার জন্য
আসা ও আসার জন্য যাওয়া; তিনি পাঠিয়েছেন
প্ল্যানড ট্যুরে। তারপরেও তল্পিবাহক নিজের ইচ্ছে মতো,
তেনার জীবন যাপন করে আপন ভেবে। ঐ রান্নাঘরে।