সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়
আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম ১লা জুলাই, ১৯৯৪, হুগলি জেলার উত্তরপাড়া শহরে। ২০১০ সালে উত্তরপাড়া অমরেন্দ্র বিদ্যাপিঠ থেকে মাধ্যমিক ও ২০১২ সালে উত্তরপাড়া চিল্ড্রেনস ওন হোম থেকে এইচ এস পাস করে আকাশ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটি কলেজে তাঁর বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক স্তরের লেখাপড়া সম্পূর্ণ করেন। বর্তমানে তিনি ‘বালাইষাট’ নামক একটি ওয়েব মিডিয়ায় কর্মরত এবং অন্যান্য কিছু ওয়েব পোর্টালে ফ্রিলান্সার হিসাবে লেখালিখি করেন। গত ৬-৭ বছরের লেখালিখিতে তাঁর কবিতা ‘কবিসম্মেলন’, ‘কৃত্তিবাস’, ‘বৃষ্টিদিন’, ‘যাপনচিত্র’, ‘আদম’ ও আরও অনেক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর বইয়ের সংখ্যা আপাতত ৫টি যার মধ্যে প্রথম কবিতাবইটি ‘আরও গভীরে মেঘ’ পাঠক প্রকাশন থেকে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় কবিতাবই ‘হাঁটছি এখন’ এবং ‘জ্যোৎস্নার ছৌ’ আঙ্গিক প্রকাশনা থেকে, চতুর্থ গদ্যবইটি ‘অস্ত্র উপচার’ তবুও প্রয়াস প্রকাশনা থেকে এবং পঞ্চম ও সাম্প্রতিকতম বইটি ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ আদম প্রকাশন থেকে প্রকাশিত।
প্রায় দশবছর সময় ধরে রাইফেল শ্যুটিং করেছেন আকাশ। খেলেছেন রাজ্য ও জাতীয় স্তরে। এবং পদক এনেছেন। ২০১৩ সালে খেলা ছাড়েন আকাশ। এরপর তিনি ২০১৩ সাল থেকে ‘মাস্তুল’ পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন এবং একই নামে একটি ক্ষুদ্র প্রকাশনা চালান। তিনি বইঘর ডট ইন নামক বাংলা বই ও পত্রিকা বিক্রয়ের অনলাইন প্ল্যাটফর্মটির কো-ফাউন্ডার। আকাশের অন্যতম সখ ডিজিটালি কভার ডিজাইন করা। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু প্রকাশনায় প্রচ্ছদের কাজ করেছেন তিনি। এসবের পাশাপাশি আকাশ ভালোবাসে গান শুনতে, বাগান করতে এবং বিভিন্নরকম বইপত্র পড়তে।
এখানে মদ্যপান মানা (১)
১
শেয়ালে শেয়াল রাখছি
গিরগিটি গোষ্ঠিদ্বন্দ্বে দিয়ে
খেলাও এগোচ্ছে আর
পাজ্ল ফুরিয়ে আসছে হাতে
দূর দেখছ, আগুন রাখছ, লালা রাখছ
স্থিতিস্থাপক জাল
সাপ ও সিঁড়ির মাঝে ঘুমিয়েছি বেহেড মাতাল
২
মগজ মগজ ঢেউ
বিজ্ঞান কলোনি থেকে
উঠে আসছে নুয়ে পড়া মঠ
লাইন পড়ছে খুব
আধার দেখাতে হলে সীবনীসহায়
যে মহিলা নেই আর, বহু অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে
গলার শব্দটুকু খুঁজে পাই ঠিকানাসমেত
এগাছে কাঁঠাল এলে ওগাছে খেজুর ঝরে যায়
৩
দু’ফোঁটা চাঁদের রস
প্রতিষ্ঠানে পা পিছলে যারা
ফোলিও বাদাম থেকে
পাতা হয়ে ঝরে পড়ল ঘাসে
তাদের যত্ন নাও, ড্রাই ফুড, সাপ্লিমেন্ট দাও
আমাকে ধারণ করবে এতখানি জায়গা খুঁজে রাখো
একশৃঙ্গ হরিণ আনো, মেটে কাটো, পাঁজর পোড়াও
সৈন্যদল ভেসে যাক ব্রহ্মপুত্র-যমুনা কোরাসে
৪
পাউডার শরীর মাখছি
তুষ দিয়ে উল্কি আঁকছি গমে
এসো হে উপত্যকা অববাহিকার কোলে বসো
এমন নষ্টযাত্রা লিঙ্গে বেঁধে সতত ওড়াও
কার আছে সাধ্য আজ, অশ্বমেধে ঘোড়া রুখে দেবে!
(প্রকাশিত)
এখানে মদ্যপান মানা (২)
১
হোগলা গ্রামের চাঁদ
কাজুবন, ঝাউবন হেঁটে
সমুদ্রে নুন ঢালে পাহড়ে জোনাক ঋতুস্রাব
প্রবল মোরাম ছুঁয়ে ডুবে যাচ্ছে জলের খোরাকী
ইতি লিখছি। চিঠি শেষ। সুরঙ্গ স্মৃতি ফিরে পাক
২
বিস্মৃত অঞ্চলসঙ্গ পুজো শেষে ফিরে আসছে পিঁদা
যে ডালিতে ফুল নেই, বিষম ঘোড়ার নাল নেই
পাঁজরে মজ্জা নেই আর আছে ঘোলাটে সোপান
উন্মাদেয় স্নান
সদ্য মুখাগ্নি সেরে উঠে এলে কিছু না-র ঘাটে
মৃতের নাভির ফুল, সহস্র বরাহ হয়ে হাঁটে
৩
‘ডান হাতটা মুঠো করে পেতে দিন গলার উপর’
নবীন উত্তরসূরি গণ্ডূষের মুদ্রা জানে না
ছোঁয়াচ বসন্ত থেকে হ্রস্ব-ই মুছে তার
আঁড়বাঁশি ছুঁয়ে ফেলে, দেখে,
ক্রমশ কঠিনতর
যেন লোহা যেন ইস্পাত
বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ সেজে চিতা লগ্নে পুড়ে যায়, কবে!
দেয়া ডাকে অঘোরি-পরবে
৪
সখের বেদানা বন ঝরে যাচ্ছে
প্রেমের দাপটে
নখ, দাঁত, প্রিয়স্পর্শ দু-ফালা জিভের
বাকল ছাড়িয়ে রেখে গর্ত হয়ে শীতঘুমে যাবে
হিমোসায়ানিন থেকে সবুজ রক্তস্রোত ছোবল স্বভাবে...
এখানে মদ্যপান মানা (৩)
১
ক্রমশ সিগন্যাল লিখতে
মুছে যাচ্ছে চাঁদমারি রোগ
উরুর জখম জুড়ে বিন্দু বিন্দু তারা জেগে আছে
একা তার বাস নিচ্ছি প্রকট গোলাপ হচ্ছি নীল
অমর দৈবত রাজ্যে পা ডোবানো হননপ্রলাপে
মরচে ধরেছে সদ্য
শরীরে ভাঙন শুয়ে থাকে...
২
গোল হচ্ছ, শোর হচ্ছ, শোর
অনন্ত গাজন শর্তে
আটচালা বিষাদ-প্রহ্লাদ
ঘুড়িতে ন্যুব্জ স্বপ্ন উড়ে যাচ্ছে জ্যোৎস্নার গ্রামে
বিষাক্ত সমুদ্র ডুবছে ফেলে রাখা খাঁড়ি ও মোরামে
৩
বয়ামে ছন্দ থাকবে, দুর্বোধ্য চাটনি থাকবে পটে
দু’পাশে সরাইখানা
চিৎকার দিনের দোসর
মাথার বেড়িতে তুলে ফর্মা ফর্মা দার্জিলিং নিয়ে
ওপাড়ে মিলিয়ে যাচ্ছে
ছেলেটি কি সেলাই শেখেনি?
৪
ষষ্ঠ সিঁড়ির দৈর্ঘ্যে খসে পড়ছে গোপন আঁতাত
শরাবির চুলা জ্বলবে
প্রতিচিহ্ন যতিচিহ্ন পুড়ে
এঘরে গন্ধ আসবে
এ লেখায় মদ্যপান মানা
শ্মশানযাত্রা ফিরে বদলেছ পুরোনো ঠিকানা?
এখানে মদ্যপান মানা (৪)
১
শহুরে বৈঠকি আড্ডা,
লাল ঝরছে,
পুরষ্কারি লাল
একদা টেবিল চাপড়ে
কক্ষপথ ছেড়েছুড়ে দিয়ে
যে সমস্ত গ্রহ থেকে উপগ্রহ দূরে চলে গেছে
তাদের তালিকা করছি,
ছিপছিপে চাঁদোয়া খাটিয়ে...
২
ভামের বিষ্ঠার মতো
গন্ধে গন্ধে কবিতা ছড়ানো
ও চাঁদ যুবতী মাগ;
মাকড়শার কতটুকু চেনো!
লালা চেনো? যৌন-অঙ্গ? কিম্বা বিষের থলি? হুল?
প্রজননি ঢেউ এসে খুঁটে খাচ্ছে দ্বিধার আঙুল
৩
প্রসব যন্ত্রণা থাক নাভিকুণ্ডে অলৌকিক আলো
সঙ্গত কেচ্ছা থেকে দরজা খুলে চন্দনা ওড়াই
কে এল আষাঢ়-ছন্দে, কে এল এ বজ্রপাতে কাঁধ
একা হাঁটো,
হেঁটে যাও,
শেষযাত্রা বাতাসা কুড়াবে...
৪
প্রকাণ্ড সঙ্কট চাই
ফিরপথে গুম থাকা চাই
প্রলয়ে কবিতা ঝরে শব্দে শব্দে উঠোন ফেটেছে
দু’চারটি যত্নে রাখব এমত স্বার্থপর ছিপে
অস্থি গেঁথেছে কারো,
যাপনফাতনা খুঁজে বুঝে
চেনা স্বর চেনা স্বর বঁড়শি বেঁধে না গম্বুজে...