
এই মাসের কবি: সৈকত রূপসায়র সরকার


এই মাসের কবি: সৈকত রূপসায়র সরকার
আলাপ-পর্ব
জন্ম: ২১ নভেম্বর ১৯৯৩, উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার আগরপাড়ায়। মফঃস্বলের স্বাদ আর গন্ধে কেটেছে শৈশব আর কৈশোর। গাঙ্গেয় হাওয়ার সান্নিধ্যে ভাসিয়ে রাখা গেছে বেশ কিছু গোধূলির আখ্যান। তবে বরাবরই একলা থাকা পছন্দ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরের পাঠ সম্পূর্ণ হয়েছে। বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে এম.ফিল গবেষণায় রত। শখ: কবিতা লেখা, প্রচ্ছদ নির্মাণ, ফোটোগ্রাফি।
লেখালিখির শুরু স্কুলজীবনে স্কুলের বার্ষিক পত্রিকায়। এরপর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে "যাপনচিত্র", "কবিসম্মেলন", "মাস্তুল""আঙ্গিক""নিবিড়""তাবিক""জলরঙ" প্রভৃতি পত্রিকায়। প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের বইমেলায় যাপনচিত্র প্রকাশনার "তরুণ কবির প্রথম বই" সিরিজে। দ্বিতীয় কবিতার বই "টোটো-বায়োগ্রাফি" প্রকাশিত হয় শব্দসাঁকো এবং বিনিসুতো প্রকাশনার যৌথ উদ্যোগে, জুন ২০১৭ এ।
কবিতা

অশ্বমেধ
(The Wooden Horse - Ganesh Pyne)
কাঠের গরলে ক্ষয়ে আসছে ঘুণ
ঘুণ তো আদিম রিপু, ঘুমের থেকেও শুষে নেয়
ঝালর পরিয়ে দেয় মাথা জুড়ে লোহার সওয়ারি
লাগামে ছিঁড়েছে গলা, রক্তে রাগিণী বেজে ওঠে
স্মৃতির স্থবির চোখ
(The Persistence of Memory)
তোমার ঘড়ির পোশাক খুলে রাখো, জাতক।
তক্ষশিলার জীর্ণ বিহারে জমে থাকা শ্রমণের শোক ঢেকে রাখছি তুষারে।
ভিক্ষু জীবন আর গার্হস্থ্যের মধ্যে আটকে রইল তোমার ত্রিশরণ মন্ত্র।
অন্য কক্ষের থেকে ফিরে আসে স্মৃতির বিলাপ।
আমাদের বিছানাবদলের প্রান্তে
অষ্টাঙ্গিক পথ বেয়ে ওঠে স্বর্ণলতার শিরা।
শেষভোজ
(The Last Supper - Leonardo Da Vinci)
আলো-অন্ধকারের বন্দিশে আমি শুধু প্রলয় আঁকছি
খুব গাঢ় রঙে জল ঢেলে দেওয়া তারল্যে
আমার চতুর্দিকে নেমে এসেছে শুভেচ্ছা-বার্তা
আফিম খেয়ে টলে যাওয়া ফুলমণির গন্ধ এখনও টেবিল জুড়ে
ধ্রুপদী আলাপের চেহারায় আমার চেনা হয়ে গেছে প্রাসাদের চূড়া
এখনও টেবিল জুড়ে বসে আছি
কৃতঘ্নের পেরেক মেনে নেব তাই
গুম্ফা থেকে লেখা
১.
কয়েকটা উঁচুনিচু মুখ
এখনই এই নাটমন্দির থেকে লামাদের গান শোনা যাবে
গুচ্ছ লাল কবিতার মতো ঘিরে থাকবে তথাগত-ভাষা
সংযমের আঁচ ঠেলে হেলান দিয়েছি গুম্ফায়
পাহাড়ও তলিয়ে গেছে মণিপদ্মে ঢেকে রাখা রঙে
তেমন মৃত্যু এলে ফেরাবেনা, ধূপ জ্বেলে দিয়ে
হঠাৎ ঘুরিয়ে দেবে আলোমাখা প্রেয়ার হুইল
২.
যে যন্ত্রে তুমি বেজে ওঠো নি কখনও
পাহাড়ি ঝর্ণার কাছে যে পাথর তোমাকে পায়নি সেদিন
যে রঙিন টুকরোর মতো কাঁচ
মনেস্ট্রির চূড়া থেকে নেমে আসছে তোমার খোঁপায়
যে আলোছায়া তোমাকে আড়াল করে কুয়াশা ঢেলে গেছে
তাদের সকলের পথ আমাকে বরণ করে নেয়
নির্মোহ শিকড়ে গেঁথে রাখে অমোঘ রুট-ব্রিজ