top of page

এই মাসের কবি : বিতান দে

IMG-20200928-WA0000.jpg

আলাপ পর্ব

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তনী বিতানের ভালোলাগার বিষয় পড়াশোনা ও লেখালেখি। নিজস্ব পত্রিকা ও প্রকাশনা 'চিলেকোঠা'। ভবিষ্যতে রবীন্দ্রজীবন ও সাহিত্যে গবেষণায় আগ্রহী। বিতানের অন্যান্য লেখা পড়তে হলে নজর রাখুন http://chilekothasampadak.blogspot.com, এই ঠিকানায় আর বিতানের সাথে যোগাযোগ করতে হলে মেল করুন: bitanbiltu@gmail.com এই ঠিকানায়।

কবিতা

পয়লা জানুয়ারি

 

শরীর জুড়িয়ে, ছিল অকারণ স্পন্দন।

ঘাট ভেঙে ভেঙে গভীরতাটুকু মেপেছি।

ভুল ভেঙে গেছে কতটুকু আর জানতাম,

ছাদের সিঁড়িতে আবছায়া, কিছু হ্যারিকেন।

 

তুলো মোড়া যত, অলস দুপুর, পার হয়।

বিড়ালের রোঁয়া হাতের মুঠোয় খসখস

সাবেকের ঘড়ি, সময় কিনতে চায় না।

নীল কুয়াশায় ঢাকা পড়ে যায় ইস্কুল।

 

তোমাকে পেয়েছি, বিকেলের এক লাইনে

সার বেঁধে সব, বাড়ি ফিরে যায় রাস্তায়।

দীপার মতোই কথারাও, সব ঝুট্ হ্যায়

ভুল ভেঙে গেলে শূন্যতা ঢাকে ফুটপাত।

 

 

আদিমতা


এমন রাতে, অগোছালো বৃষ্টি নামে।

বাতাসে কান পাতলে শোনা যায় হাসি।

এমনই রাতে এক কাহাবৎ মনে পড়ে,

আর ভেসে আসে বেহালার সুর।

তানপুরাটায় ধুলো পড়েছে।

তোমার ঠোঁটেও তো জমেছে ধুলো,

বহুদিনের স্পর্শের অভাবে!



 

 

 

যা কিছু গোপনীয়


১.


সারিন্দা বাজার শেষ মুহূর্তে একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়েছিলাম‌।

পাহাড়ের টিলায় এই স্বর সচরাচর শোনা যা‌য় না।

আমার দোসর সেদিন মৃত্যু হতে পারত।

বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আমি ঘেসো রঙের টিলাটার এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিলাম

মৃত্যু আসেনি,

সারিন্দার স্বরকে বুঝি মৃত্যু ভয় পায়?


২.


সময়ের বয়েস বাড়ে কিন্তু বুড়ো হয় না।

নিষিদ্ধ পল্লিতে যেতে যেতে ছেলেটা

ভালোবাসতে শিখেছিল।

রোজ সেই একই স্যাঁতসেঁতে বিছানা, আর গন্ধের ভিতর নতুন কিছু খুঁজে পাবার আশায়, বেড়ালের মতো পা টিপে টিপে চলে যেত।

কখনো বা ঝাঁপিয়ে পড়ত;

ভালোবাসা শিখেছিল বুঝি ছেলেটি?

আজ তার বয়স বেড়েছে।

সয়য়ের ভারে, সেই টুকরো নিষিদ্ধ পল্লির ঘর আর তার বিছানায় কোনো তফাৎ নেই।



 

 

 

বিস্মৃতি


দূরের পাহাড়ে ছোটো বাড়িটুকু ছিল।

হারানো শহরের শেষ চিহ্নের মতো,

সেই বাড়িতে আজ একটা অতীত বসবাস করে।

আমার ভবিষ্যৎকে সেই অতীত,

বদলাতে পারে না।

যেদিন তোমার চোখের জল আর জিভের স্বাদ বদলে গিয়েছিল; সেদিনই ওই বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলাম।

ঘুমের মধ্যে কেবল বাড়িটা ভেসে আসে কখনো কখনো।

তোমাকে আর মনে পড়ে না‌।



 

 

 

অতীত-ভবিষ্যৎ নয়


যেটুকু চাওয়ার ছিল, সেটুকুও চাইতে পারিনি।

দূরে থেকে শোনা যেত বেহালার আনমনা সুর।

নদীর ওপারে সাঁকো, জোড়া ছিল কোনো একদিন

কেবল নিশুতি রাতে, তুমি চলে গেছ, বহুদূরে।


পাথর কুড়িয়ে পাওয়া কালশিটে মুখে লেগে আছে।

আমার বিষাদ মেখে, পুরনো শহর জেগে ওঠে

পাহাড়চূড়ায় আমি উঠতে পারিনি কতকাল;

রাতের সাঁকোয় কেন অযাচিত আলো জ্বলে ওঠে?


চলে গেছ তুমি তবু, বহুদিন না তাকিয়ে দেখে‌

এইটুকু কাহাবৎ, শুনে যদি, ফিরে এসে দেখো।

অচেনা নাবিক হয়ে নদীটুকু তোলপাড় করে।

সাঁকোটাকে জুড়ে দেব দেয়াসিনী, হারিয়ো না শুধু



 

 

 

মোম


মোম।

জ্বলতে জ্বলতে আজ ক্ষয়ে গেছ পিলসুজ বেয়ে।

আলো দিয়েছিলে একদিন।

নিভু নিভু ছায়া শুধু কেঁপেছিল ক্ষণিকের মতো।

ছায়া ছিল ভালোবেসে, আদরেতে জড়াজড়ি করে।

তুমি শুধু আলো দিয়েছিলে।

কাঁপা কাঁপা স্পন্দনে তুমিও কি ভালোবাসা চাও?

প্রতিরাতে ক্ষয়ে চলা শুরু হয় আমার ভিতরে।


 

 

 

মোম।

তুমি জ্বলতে থাকো, নিজের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে তুমি জ্বলতে থাকো। তোমার ওই তিরতির করে কাঁপা শিখা, আসলে ছায়ার অন্ধকারে ডুবে থাকা ছোট্ট একটা ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখে সবসময়। ছোট্ট হলেও তো সেটা ভালোবাসা! মোম তুমি গলে যেতে যেতে ওই ছায়া আর ভালোবাসাটুকুতে মাখামাখি হয়ে যেতে পারো না?




 

 

প্রলাপ ৩



ভালোবাসার মধ্যে কেবল একটা মিথ্যে ছিল।

পুকুরে ছিপ ফেলে মাছ ধরতে বসা লোকটার জালে যেমন মিথ্যে ছিল, পরীক্ষার খাতায় উঁকি মারা চোখের ভেতর যেমন মিথ্যে ছিল,‌ ঠিক তেমনই কি?

রোজ রাতে কাঁথা বদলাতে বদলাতে ফুটপাত পেরোয় যে পাগলটা সে মিথ্যে বলে না। সরস্বতী পুজোয় একরাশ হাতের মধ্যে থাকা ফুলের মাঝখান থেকে হিসেবি চোখ খু্ঁজে নিতে চায় কাউকে। একরাশ জটিলতার অবসান হবে না জেনেও কেবল জটিল সম্পর্কের স্তর খুঁজতে খুঁজতে যারা পাগল হয়ে যায়; তারা মিথ্যেকে দেখেনি।

মিথ্যে কেবল ছিল ভালোবাসার মধ্যে। আজো কেউ একটুকরো মিথ্যে নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। তার বেঁচে থাকা ভালোবাসাকে মিথ্যে করে, মিথ্যে ভালোবাসাই নদীর স্রোত ধরে চলে যায় মোহনার দিকে। চোরাবালিরা যেখানে একা, সেখানে ভালোবাসা মিথ্যে। গভীর অতলে তলিয়ে যাওয়ার সত্যিটুকুই বাঁচিয়ে রাখতে পারেনি যে, তার কাছে কোনোদিন ভালোবাসারা সত্যি হতে পারে না।


 


 

 

 

প্রলাপ ২



যে শরীর চলে গিয়ে, শবটুকু ছিল পড়ে শুধু,

সেই যদি ফিরে এসে ভালোবেসে নতজানু হয়?

বাদামি রঙের এক, ব্যথা জেগে ওঠে তবু চোখে

হিসেব-নিকেশ ভুলে অপরাধ ক্ষমা চেয়ে ওঠে।


ভালোবেসে যারা সব দিয়েছিল নিজেদের মতো।

কাহাবৎ শুনে তারা, প্রত্যাশা করেনি পূরণ।

নিজের তাগিদ ছেড়ে চলে গেল বহুদূর তারা

নাগরিক অবসাদ তাদের মতোই কাজ করে।


আমার ভিতরে থাকা পাপ যেন কালো হয়ে আসে।

অসময় যাদেরকে, এনেছিল অনাগতভাবে;

ভালোবাসা ভুল করে, হেসে ফের কাছে টেনে নেয়।

শপথ মিলিয়ে করা অপরাধ অনায়াসে যেতে!


অসময় ভুলে যেই, অপরাধী খোয়াব বুনে যায়

ভালোবাসা তার কাছে কয়েদীর মতো ধরা দেয়।


 




প্রলাপ ১


বাইরের ঘরে একা একা ঘুমাইনা কতদিন। পাহারাদারের লাঠি ঠকঠক আর বাঁশির শব্দ কানে আসে না। বহুদিন রোদের তাপ পড়ে না গায়ে, চাঁদের আলো বারান্দায় এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে না‌। বহুদিন জ্বরে পুড়ে প্রলাপ বকতে বকতে রাস্তা পার করি না আর। অজস্র ফাঁকা রাত জানিয়ে দেয়, আমি আসলে বড়ো হয়ে গেছি; বিপুল বিশ্বাসে মিলিয়ে যাওয়ার মতো বড়ো।

 

bottom of page