top of page

নন্দিনী আর রবীন্দ্রনাথ

তাপসকুমার চক্রবর্তী

 

ছাতিমতলায় যাইনি আমি। ভিড়ে ভীষণ একলা লাগে

দূরের থেকে গান শুনেছি। গাঁয়ের ভেতর স্বর্ণরথে

কখন তুমি রাজার বেশে, কখন তুমি পাগলা বিশু।

শহর থেকে উজিয়ে আসি কোপাই পথে খোয়াই পথে।

 

খোঁপায় হাজার জট পেকেছে রাঙা মাটির ধুলোর ঝাপট

দু'চোখ জুড়ে ঘুম এসে যায়। ফুরোয় না দিন একলা চলার।

তোমার জন্য বৃষ্টি ভেজে ক্ষুব্ধ ফাটল অনেক দিনের

ধবলকান্তি মেঘ শরীরে সারা আকাশ রজস্বলা।

 

কাউকে আমি ছুঁইনি, জানো? তোমার জন্য। তোমার জন্য

সাজিয়ে রাখি যত্ন করে এই যে শরীর লেখার খাতায়

সবাই দেখে কলঙ্কভার ওড়না আঁচল চুঁইয়ে পড়ে

একটা মানুষ কেমন করে সারা জীবন ভুল করে যায়!

 

লেখো কবি জমিয়ে লেখো ভাসাও তোমার নৌকাবিলাস

ভেঙে চুড়ে সাজাও আমায় পড়শি দেখুক সমস্ত রাত

জ্যোৎস্না মাখে অন্ধকারেও পাগল হয়ে দু'জন মানুষ

কোপাই পথে খোয়াই পথে নন্দিনী আর রবীন্দ্রনাথ

 

 

 

ধৃত মীনশরীর

সুপর্ণা মণ্ডল

 

মেঘেরা জাঁতা ঘোরায় আকাশের উপর

জাঁতা ঘোরানোর শব্দ শুনে

পুকুরে ভেসে ওঠে নীল নীল মাছ

সাদা মাছ

মৃত্যুর খুব কাছে চলে এলে মাছেরা

গোল গোল চক্কর খায় জলে

ভেসে ওঠে

একটা মাছের পক্ষে বার্ধক্যজনিত মৃত্যু কত দুর্লভ!

তবু মাছেরা খালি উজানে যেতে চায়

ওরাও মানুষের মতো ঈশ্বরকে খোঁজে

খুঁজতে খুঁজতে মরে যায়

আর গোল গোল চক্কর খায় জলে।

 

 

পাথর

বিক্রম ঘোষ

 

মায়ের খুব পাহাড় দেখার শখ ছিল

 

বাবা কথা দিয়েছিল তাকে

পারেনি,

তবে বুকের উপর একটা একটা করে পাথর জমাচ্ছিল

তৃষ্ণার্ত।

অন্তত মাথার উপর ছাদ,

একটা চাঁদ আর দুটো ছায়া বড়ো হতে হতে ছুঁয়ে ফেলবে দূরে

উঁকি মারা শিউলির শিশির-স্নাত পাতায়.....

অথচ,

 

অথচ সে পাথরগুলো মা নিজের বুকে আগলে রেখেছে

একদিন ঠিক ওইরকম বাড়ি বানাবে; নাম হবে সন্ধ্যাতারা

মা এখন আর পাহাড় ভালোবাসে না

ভারী শরীর দুটো সরু পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকে, চলাফেরা করে

ট্রাম, মেট্রো, বাস, অফিস,দপ্তর

রান্নাঘর

তার সাথেই যন্ত্রণা আর পেন কিলার, কি সাবলীল

আমি জানি মা কোন দিনই পাহাড়ে উঠতে পারবে না

 

পাহাড় তুমি কেন ফিরিয়ে দাও না?

তুমি কথা ছাড়া কিছুই কি ফিরিয়ে দিতে পারো না?

সমুদ্র যেমন পারে।

 

 

সিটি স্ক্যান

দেবার্ঘ সেন

 

আলো পড়লে যেসব চরিত্রের ছায়া বদলে যায়

তারা মনে করিয়ে দেয়, আত্মগোপনের ক্রাইম সিন।

 

নিশুতি রাত মাথার ভেতরে ঘুরপাক খাওয়ায়,

নিম্নবর্গীয় ব্যবস্থাপনা।

 

ভোঁতা হয়ে আসে পেন্সিল অথবা কোনও লুব্ধ মস্তিষ্ক।

 

রাত, স্বভাবতই রহস্যময়।

 

লুব্ধ মস্তিষ্ক সিটি স্ক্যান টেবিলে শুয়ে ঢুকে যায়

বৃত্তাকার স্ক্যানারে

ঠিক যেমন

ভোঁতা পেন্সিল মাথা গুঁজে দেয় শার্পনারের ভেতর..

 

 

শীতঘুমে ভেরোনিকা 

সিমন রায়

 

১.

 

এঁটো পুরুষের মুখে নিয়তই মেলে দাও যবনিকা

তবুও পূর্ণ হও - কার্টেন কলে ভেরোনিকা

প্রকোষ্ঠে নিরোধ যেন সেঁটে আছে কলিজার

মায়াবী হরিণী গন্ধে - মাপা পায়ে, মাংসবাজার

রাষ্ট্রে বরফ নামে - দিনলিপি স্তব্ধ হয় তোমার ঝর্ণায়

মানচিত্র জোড়া প্রেমে ভেরোনিকা - আদর বেঁধেছে ফর্মায়।

 

২.

 

কিছুক্ষণ চোখ খুলে থাকা চাই। অক্ষর বিনুনি সব

পাকদণ্ডী খোলে। আমার সমস্ত ঘড়ি দুড়দাড় উড়ে

যাচ্ছে তাদের বর্ষাতিতে। টিপটপ পলক নিচ্ছে  অপটিক ইশারা।

কপালে তুষার নিয়ে সিগারেট স্তব্ধ। নিবিড় অসমোসিসে

লিপ-গ্লস চেয়েছিল আগুন। আহা জন্ম ! নরকের সিগারেটে

ফিল্টার করে পাঠালে না আমাকে ! অযুত শীত ঢেলে

ঠোঁটগুলি কুঁকড়ে দিচ্ছে আমায়। ইমিগ্রেশন ভেঙে ঢুকে পড়ছে ল্যাকমে-তটিনী...

 

আমিও সসেজ হবো তাহাদের ব্রেডে

জানিব সিদ্ধ তারা কোন নিপাতনে,

নষ্ট শসার শীতে নাকি অ্যালোভেরা গানে !

 

৩.

 

শীতঘুম, বুড়ো মদ আর ভেরোনিকা; খাদের কান্নামাখা রীড উথাল-পাথাল

ঘাসে ঘাসে ক্যারামেল বিকেল; সন্ন্যাস চড়িয়ে বেড়ায় নিয়তি-রাখাল

আলনার স্মৃতি নিয়ে উপকথা ঝুলে থাকে, সরবতী চুমুক মারি মরশুমি প্রেমে

মগ্ন শিখরে মহাসুখ, বৌদ্ধ কর্কটে তাহার পরম আসে নেমে।

আহা প্রেম এক ছিপি, সুড়ুৎ সুখের খালে ঘাই মেরে যাই

পদ্মমূল ইতিহাসে আলোকবর্ষ খাবি খাই -

হাজারদুয়ারি অন্ধকারে ভেরোনিকা, কনফুসি সংঘ ছায়ায়

আমারই বিম্বপটে ভূত-ভবিষ্যের বিশ্বরূপ দেখায়।

 

৪.

 

গুনতে গুনতে ট্রাফিক জমে যায়

                                        বলিরেখায়

বকেয়া চুমুর স্মৃতি - পুরাতন আঁচড়ের চিন্‌চিন্‌

পেঁয়াজ-খোসার শরীর - নিভে যায় উষ্ণতম দিন

 

যেন পবিত্র খাদের কিনার

জোড়া চাঁদ দুধেল স্বপ্ন নিয়ে নামে -

নরম আলোর আখ্যান

লুকোনো ডানায় ভেরোনিকা

 

বেড়ে দেবে আজন্ম পিপাসা?

শুধুই অভাব অভাব খেলা -

একরোখা উঁকি-উঁকি ভালোবাসা !

bottom of page