সকল বায়ুর প্রাচুর্যে
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়
মানুষই বেশি দাহ্য, অন্তর্দহনে তার গোটা এক আমাজন বুঝি ছাই
হয়ে যেতে চায়! তবু যতো রয় দস্যু ও প্রতারক দেহ-পোড়া শ্রান্ত
শ্মশানে কেউ তারা প্রাণহরা নয়, বিনীত সহাস্য গেঁজেল বরং –
প্রাণধারী মানুষের আগমন ঢের বেশি বীজ বুনে দিয়ে যায় তাহাদের
নিরস্ত্র অন্ধকারে; জিঘাংসা জিজ্ঞাসা হয়ে যায়, দুর্বাসা-রাগ দূর্বা ঘাসের
আপ্ত-সবুজের মতো নেমে আসে পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু ঘাসফড়িঙের কাছে।
কী ছিল জীবন? কেমন কাটালে কৃষিকাজ? – এ ত তাহাদেরই জিজ্ঞাসা –
যে-সকল গাছ মিলেমিশে থাকে বিবশ প্রেতের রূপে...
যে-সকল শব্দ হয় উৎসহীন শব্দ-ঝোরার জলে...
মনের প্রাণ তখন নক্ষত্রের পল্লবে অনীহার মালা হয়ে বুঝি থাকে!
প্রাণের মনটি তবু এখানেই চিরদিন থাকে পড়ে – এইখানে গাছের নিচে
সকল বায়ুর প্রাচুর্যে যখন আমাদের প্রশ্বাস একেবারে কম পড়ে যায় ...
নির্বিবাদী
প্রতীক মাইতি
অনেক দূরের দেশে যুদ্ধ শুরু হলো
আমাদের দেশে এখন রাস্তায় শুকাচ্ছে মরচে ধরা বন্দুক, উঠোনময় টোটা - বারুদ
ভিতর ঘরে দাবার দান দিচ্ছে গল্পের নীল শেয়াল আর বৃদ্ধ পশুরাজ
আমাদের দেশে আগে রাস্তায় শুকাতো সেদ্ধ ধান, উঠোনময় খেসারির বড়ি
ভিতর ঘরে ফুটতো ভাপা পিঠে আর খেজুরের গুড়
যুদ্ধ আমাদের দেশে এখন নতুন নয় বলে সবাই অনায়াসে হেঁটে যাচ্ছি অফিস, রেস্তোরাঁ, মেলায়। দিব্যি মাড়িয়ে যাচ্ছি পূর্বপুরুষের শ্মশানযাত্রায় ছড়ানো খই।
হারিয়ে যাওয়া চিঠি
সুপর্ণা মণ্ডল
হয়তো মাঝপথে হারিয়ে গেছে চিঠি
আর তুমি অভিমান করে থেকেছো উত্তর নেই বলে।
মাঝখানে অনেকটা দূরত্ব থাকলে এমন হয়।
আসতে যেতে অনেকটা সময় লেগে যায়,
আর পুঞ্জ পুঞ্জ অভিমান জলীয় বাষ্পের মতো জমতে থাকে।
তারপর একদিন আদিগন্ত মেঘ করে আসে,
আর আকাশ থেকে ঝরে পড়ে
হারিয়ে যাওয়া
লক্ষ লক্ষ চিঠি।
অস্তিত্ব~অবাঞ্ছিত পলাশ
সুবর্ণকান্তি উত্থাসনী
যে রমণী প্ৰেমিকের সঙ্গ পেল কিন্তু সততা পেলো না
আমি তার গোপন নির্বেদ কিংবা দৃশ্যত কেউ নই
আড়ালে অভিসারে শুনি প্রেমহেতু ঢালমাত্র সতীত্ব
দুরূহ মিলনের ক্ষুধা শ্বাসরোধী বাজায় বিউগল
তোমার ডাগর মৃগচোখে প্রক্ষালিত অজস্র নগর
কতজন ঝাঁপ দিয়ে তুলে আনে মিথেন ও ফসফিন্
বাবাও এমনই ছিলেন
চাল কিনতে বেরিয়ে যেন
ফিরতেন মহাদেব হয়ে
মাও বা সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা
শেষে আমার থালায় ফ্যান
অসহায় বাবা বলতেন দুঃখ সৎ এর ভূষণ
মা বলতেন বড় হ বুঝবি দুর্ভিক্ষ সতীত্ব চেনায়
বিলাপের অন্যনাম উত্তরাধিকার ঋণ আছে জরা
আছে জন্মসূত্রে পাওয়া নিষ্যন্দী বিছানা ঘুম আসেনা
তোমার অপসুদীক্ষা হারপুন বিঁধে অর্জিত স্থাবরে
সংসার করতলে পেতে পান করি বিদেহী পলাশ
কালো কবিতা
শোভন মণ্ডল
একটা কালো রঙের সভ্যতা থেকে আমি উঠে এসেছি
মনে হয়
সারা চরিত্র জুড়ে অনন্ত ব্ল্যাকশেড
সে আমি না বললেও বুঝে গেছো জানি
আমার চোখের দিকে তাকালে আকাশ মেঘলা হয়
দপ করে নিভে যায় আলো
তোমাকে ছুঁয়ে দেওয়ার পর
কে যেন সারারাত
আঁধার জ্বালালো